নাজমুল ইসলাম ফারুক: এক বছরমেয়াদি স্থায়ী আমানতে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় শতাংশ হারে সুদ দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক। অন্যদিকে ২০১৬ সালের সমাপ্ত বছরে ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ ১০ শতাংশ। আর এ লভ্যাংশের প্রকৃত মুনাফার হার (ইল্ড) দাঁড়িয়েছে মাত্র এক দশমিক ৫৬ শতাংশ।
পূবালী ব্যাংকের এক বছরমেয়াদি স্থায়ী আমানতে সুদহার সাড়ে পাঁচ শতাংশ। ব্যাংকটি ২০১৬ সালের সমাপ্ত হিসাববছর শেষে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৩ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ। আর আলোচিত লভ্যাংশের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত মুনাফার পরিমাণ (ইল্ড) দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক শূন্য আট শতাংশ।
শুধু ব্র্যাক বা পূবালী ব্যাংকই নয়। এমন অবস্থান গত সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়া ছয়টি ব্যাংকের। এসব ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড গেইন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে ১৭টি ব্যাংকের ইল্ড স্থায়ী আমানতের চেয়ে বেশি। এসব ব্যাংকে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা ভালো মুনাফা করেছেন।
ইয়াহু ফাইন্যান্সের ভাষ্যমতে, কোনো কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের আয়ের যে অংশ দেয়, তা হলো লভ্যাংশ। এটি সাধারণত শেয়ারপ্রতি আয় প্রকাশ করে। তবে বিভিন্ন কোম্পানির লভ্যাংশের হারের মধ্যে তুলনায় ব্যবহার করা হয় ইল্ড বা প্রকৃত মুনাফা। এক্ষেত্রে লভ্যাংশকে শেয়ারদর দিয়ে ভাগ করে প্রকৃত মুনাফা নির্ণয় করা হয়। শেয়ারদর বেশি হলে আর লভ্যাংশ কম দেওয়া হলে ইল্ড নি¤œমুখী হয়।
ইল্ডের গ্রহণযোগ্য কোনো হার না থাকলেও মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক সুদহারের চেয়ে ইল্ড বেশি হওয়া উচিত বলেই মত সংস্থাটির।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারমূল্য বাড়া-কমার এবং লভ্যাংশের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত মুনাফার হার (ইল্ড) পরিবর্তন হয়। যদি কোনো ব্যাংকের শেয়ারদর বেশি কিন্তু লভ্যাংশের পরিমাণ কম থাকে তাহলে ইল্ড কমে যাবে। আবার শেয়ারদর কম লভ্যাংশ বেশি দিলে ইল্ড বাড়বে। তবে গত সমাপ্ত বছরে ব্যাংকিং খাতের অধিকাংশ কোম্পানির প্রকৃত মুনাফার হার বা ইল্ড ভালো। যেসব কোম্পানির ইল্ড কম, সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগকারীরা তেমন লাভবান হতে পারেননি বলে মনে করছেন তারা।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হালিম চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর আয় আগের চেয়ে বাড়ছে। তবে সমস্যা হলো আয় বাড়লেও প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। তবে পুঁজিবাজারে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ইল্ডের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করে না। কোম্পানির ফিচার দেখে বিনিয়োগ করে। তবে ইল্ড যদি পাঁচ শতাংশের আশপাশে থাকে তাহলে ভালো।’
তথ্যমতে, স্থায়ী আমানতের চেয়ে যেসব ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফার হার (ইল্ড) কম সেগুলো হলো ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের গত সমাপ্ত হিসাববছরে ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আর প্রকৃত মুনাফার হার দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক ৫৭ শতাংশ। অথচ ব্যাংকটির স্থায়ী আমানতের সুদের হার তিন দশমিক ৪০ থেকে সাড়ে তিন শতাংশ।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে স্থায়ী আমানতের সুদের হার সাত শতাংশ। ব্যাংকটি গত সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মোট ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ রয়েছে। আর প্রকৃত মুনাফার হার (ইল্ড) দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক ৬০ শতাংশ।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড আগের বছরের ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। তবে গত সমাপ্ত বছরে ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। এতে ব্যাংকটির ডিভিডেন্ড ইল্ড দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক ৩৭ শতাংশ। অথচ ব্যাংকটির স্থায়ী আমানতের সুদের হার পাঁচ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এদিকে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের স্থায়ী আমানতের সুদের হার ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত সমাপ্ত বছরে ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মোট ১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। এর মধ্যে পাঁচ শতাংশ নগদ। এতে প্রকৃত মুনাফার হার দাঁড়ায় চার দশমিক ২০ শতাংশ।
Add Comment