পুঁজিবাজার জিজ্ঞাসা
মো. শফীকুল আলম
এসিএস, এফসিএ, এফসিএমএ
(গতকাল প্রকাশিতের পর)
শেয়ারসংশ্লিষ্ট ব্যবসাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসা না বলে বিনিয়োগ বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে এটাকে একটি যুক্তিপূর্ণ অবস্থায় ভাগ করা যেতে পারে। অর্থাৎ একটি অংশ ব্যবসা বা ঞৎধফব এবং বাকি অধিকাংশ বিনিয়োগ বা ওহাবংঃসবহঃ হলে আমার খুব বেশি আপত্তির জায়গা থাকবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, কত পরিমাণ মূলধন বা পুঁজি হলে শেয়ার ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। মূলধন যে কোনো ব্যবসাতেই খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে এটা যদি হয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, তবে তো কোনো কথাই নেই। এক্ষেত্রে পুঁজি বা মূলধন আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হয়। অর্থনীতির কথা হচ্ছে ‘যত বেশি ঝুঁকি, তত বেশি মুনাফা’; কিন্তু এ ঝুঁকি হতে হবে যুক্তিযুক্ত এবং হিসাব-নিকাশের মধ্য থেকে। বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারলে বেশি আয় করা সম্ভবÑএটাই একটি সাধারণ ধারণা। তবে শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য মূলধনের নির্দিষ্ট পরিমাণ অথবা সর্বনি¤œ কত পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে, তা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন।
এক্ষেত্রে এটা বলা যেতে পারে, কমপক্ষে নি¤œতর একটা পরিমাণ মূলধন কিন্তু অবশ্যই প্রয়োজন এবং তা নিজের জমানো বা সঞ্চিত মূলধন হওয়া অতিব জরুরি।
পুঁজিবাজার যখন খুবই বুলিশ বা শেয়ারের মূল্য ঊর্ধ্বগতির দিকে থাকে, তখন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এ বাজার নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত থাকে। সাধারণের মধ্যে এ ধারণা জšে§ যে, এ বাজারে বিনিয়োগ করলেই মুনাফা নিশ্চিত। নিজস্ব পুঁজি থাক বা না থাক, প্রত্যেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এ সময় বিভিন্ন গুজবে কান দিয়ে মানুষ লোভী হয়ে ওঠে এবং ন্যূনতম বিচার-বিশ্লেষণ না করেই বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। তারা সাধারণত খেয়াল করেন না তাদের মূলধনের পরিমাণ কী বা কত। অনেক ক্ষেত্রে তারা ধারকর্জ করেও বিনিয়োগ করে থাকেন।
এ ধরনের বিনিয়োগকারীর প্রতি আমাদের একটাই পরামর্শÑনিজের মূলধন না থাকলে এবং ন্যূনতম কিছু বিচার-বিশ্লেষণ না করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বা ব্যবসায় নামবেন না। তাহলে এখন আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কতটা প্রাথমিক পুঁজি নিয়ে বিনিয়োগ শুরু করবেন। দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা? এ পরিমাণ প্রাথমিক পুঁজি নিয়ে বিনিয়োগ শুরু করা যেতে পারে। তবে শুরুতেই খুব বেশি মুনাফার আশা করা বোধ হয় সঠিক হবে না। ধীরে ধীরে যত সঠিক অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে, তত সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বেশি মুনাফা লাভের। কারণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
বলা যেতে পারে, শুধু মূলধন বিনিয়োগই মুনাফা লাভের একমাত্র উপাদান নয়। তাই অভিজ্ঞতার মূল্য অপরিসীম, পুঁজিবাজার সম্পর্কে আপনার সঠিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকেও মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অপরদিকে কারও হয়তো পর্যাপ্ত বিনিয়োগযোগ্য অর্থ আছে অথচ অভিজ্ঞতা বা ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা পর্যাপ্ত নেই; তার জন্য মুনাফা করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এজন্য পুঁজি সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতা অর্জন ও ব্যবসার সব দিক জেনে নেওয়াই সাফল্যের অন্যতম নিয়ামক বা চালিকাশক্তি হতে পারে।
আমরা সবাই জানি, পুঁজিবাজার একটি ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক লেনদেনের বাজার। তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পূর্বেই এ বাজার সম্পর্কে যেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব, তা করে নিতে হবে।
পুঁজি বিনিয়োগ সময়ের ভিত্তিতে চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন বিকল্প বিনিয়োগের ধরন ব্যাপ্তিকাল
ক দীর্ঘমেয়াদি দুবছর থেকে পাঁচ বছর বা তদূর্র্ধ্ব সময়ের বিনিয়োগ
খ মধ্যমমেয়াদি ১২ মাস থেকে দুই বছরের বিনিয়োগ
গ স্বল্পমেয়াদি তিন মাস থেকে ১২ মাসের বিনিয়োগ
এখানে উল্লেখ্য, অতি অল্পমেয়াদি বিনিয়োগকে (অর্থাৎ এক সপ্তাহ থেকে তিন মাসের বিনিয়োগ) আমি ব্যক্তিগতভাবে বিনিয়োগ বলার পক্ষে নই। এটিকে মূলত ‘ট্রেড’ বলা যেতে পারে। পুঁজিবাজার সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান না থাকলে এ ধরনের বিনিয়োগ বা ট্রেড খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। যারা এ বাজারে আট হতে ১০ বছর অর্থাৎ নিবিড়ভাবে জড়িত, তারা হয়তো তাদের বিনিয়োগের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ বিনিয়োগ করতে পারেন। যদিও আবার উল্লেখ করতে চাইÑএ ধরনের বিনিয়োগের ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ নেই বললেই চলে।
আমাদের পরামর্শ হতে পারেÑউপরোক্ত প্রথম তিন ধরনের বিকল্প বিনিয়োগের ধরন হতে আপনার বিনিয়োগ পোর্টফোলিও ঠিক করা। এক্ষেত্রে আমরা উদাহরণ হিসেবে ধরে নিতে পারি যে, একজন ব্যক্তির কাছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগযোগ্য পাঁচ লাখ টাকা রয়েছে। এখন তার উচিত হবে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি ভালো মৌল ভিত্তির কয়েকটি শেয়ার বা স্কিপ্ট নির্বাচন করতে সময় নিয়ে বিশ্লেষণ করা। ধরা যাক তিনটি বিভাগ থেকে তিনটি ভালো কোম্পানির শেয়ার নির্বাচন করা গেল। এখন প্রশ্ন, সর্বমোট বিনিয়োগযোগ্য অর্থের কত শতাংশ কোন কোন বিভাগে বিনিয়োগ করা উচিত হবে।
আমাদের বিবেচনাবোধ ব্যবহার করে নি¤œরূপ একটি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। যথা বিনিয়োগের ধরন বিনিয়োগের পরিমাণ (শতাংশে) দীর্ঘমেয়াদি ৩০%
উপরোক্ত হিসাবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিবেচনায় ধরা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার বিশ্লেষণ করলে এ চিত্র অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন হবে। আরও উল্লেখ্য, পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ছাড়া অন্যের কথা শুনে প্রাথমিকভাবে অতি স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ সঠিক মনে করি না।
এবার আসুন, বোঝার চেষ্টা করি বিনিয়োগের ধরন অনুযায়ী কী ধরনের শেয়ার আমরা নির্বাচন করবো এবং নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা নি¤œলিখিত বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনার রাখবো (বিনিয়োগের ধরন অনুযায়ী) : (চলবে)
লেখক : সুপারস্টার গ্রুপের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও কোম্পানি সচিব
Add Comment