শেয়ার বিজ ডেস্ক: পাকিস্তানের জন্য নতুন করে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে চীনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক (আইসিবিসি)। গত শুক্রবার তারা এ ঋণের অনুমোদন দেয়। খবর: রয়টার্স।
চীনের এ ঋণ অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার। তিনি বলেন, এ অর্থ বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াবে।
অর্থমন্ত্রী টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, এ ঋণ তিন কিস্তিতে পাকিস্তানে আসবে। এর মধ্যে প্রথম কিস্তির ৫০ কোটি ডলার এরই মধ্যে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে চীন থেকে এ সহায়তা পেল পাকিস্তান। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় পাকিস্তান আইসিবিসিকে যে ঋণ পরিশোধ করেছিল, তা-ই আবার ফেরত পাচ্ছেন তারা।
লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে হিমশিম খাওয়া পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, যা দিয়ে তিন সপ্তাহের আমদানি বিল মেটানোও অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। দশকের পর দশক ধরে দেশের ক্ষমতাকাঠামোয় সামরিক বাহিনীর প্রাধান্য, দুর্নীতি ও অপচয়-অপব্যয়ের জেরে ভয়াবহ রিজার্ভ সংকটে পড়েছে দেশটি। কোনো দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তিন মাসের আমদানি ব্যায়ের সমপরিমাণ ডলারের মজুত থাকতে হয়, কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে পরিমাণ ডলারের মজুত রয়েছে, তা দিয়ে বড়জোর দু’সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। তাই দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তার অংশ হিসেবে চীন এরই মধ্যে ইসলামাবাদকে ৭০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ৩ ফেব্রুয়ারির দেয়া হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ১৭ কোটি ডলার কমে গেছে। এখন এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯০ কোটি ডলারে।
আগের ঋণ চুক্তি অনুযায়ী তারা যা পরিশোধ করেছিল, তার থেকে ২০০ কোটি ডলার ফের ঋণ দিচ্ছে চীন। জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরের ঘাটতি মেটাতে বাইরে থেকে ৫০০ কোটি ডলার দরকার পাকিস্তানের।
ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তি করতে পারলে বাইরে থেকে আরও অর্থ পাওয়া যাবে। আইএমএফের সঙ্গে ওই চুক্তি আগামী সপ্তাহের মধ্যে হওয়া উচিত বলেও মনে করছেন দেশটির অর্থনীতিবিদদরা। তাই ঋণখেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা দেশকে এ বিপর্যয় থেকে বের করে আনতে পারব।
পাকিস্তান আইএমএফের কাছে ঋণ সহায়তা চায়। এ নিয়ে কথাবার্তাও শুরু হয়েছিল। তবে বর্তমানে সেই আলোচনা ‘ঝুলে যাওয়ায়’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ অর্থের ছাড় এখনও হয়নি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রাধিকার পরিবর্তন করেছে আইএমএফ। ফলে দু’পক্ষের ঐকমত্য আবারও পিছিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে পাকিস্তান ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানি রুপির দাম পড়তে পড়তে এখন ডলারপ্রতি ২৮৫ রুপিতে পৌঁছেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। ১৯৯৮ সালের পর থেকে এখন সর্বনি¤œ স্তরে নেমে এসেছে রিজার্ভ।
রিজার্ভ নেমে যাওয়ায় পাকিস্তানে এখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে খাদ্য-জ্বালানি-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। আটা, ডাল, চাল, দুধÑসবকিছুর দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ফলে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে দেশটির সাধারণ মানুষ।
এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে সম্ভাব্য চরম বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে দেশটির পাশে দাঁড়াল দীর্ঘদিনের মিত্র চীন। দেশটির দাবি,
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে রয়েছে পশ্চিমারা। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, কিছু উন্নত দেশের আর্থিক নীতি পাকিস্তানসহ বহুসংখ্যক উন্নয়নশীল দেশের আর্থিক সমস্যার মূল কারণ। একই সঙ্গে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার জন্য সব পক্ষকে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানোর জন্য আহ্বান জানান তিনি।