বিএনপির সময়ের ২২ টাকার চাল এখন ৬০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির সময়ে চালের দাম ছিল বড়জোর ২২ টাকা। এখন মোটা চালের দাম কমপক্ষে ৬০ টাকা। ডাল, লবণ, তেল, এমনকি যে ডিম সাধারণ মানুষের একমাত্র প্রোটিন, সেটিও নাগালের বাইরে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি এক লাফে কেজিতে ৬০ টাকা বেড়েছে। গরু-খাসির মাংসে এখন হাত দেয়ার কথা মানুষ চিন্তা করে না, এটাই বাস্তবতা।

গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম ও বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

‘যে আওয়ামী লীগার আগে স্যান্ডেল পরত, সেই আওয়ামী লীগার এখন গাড়ি চালায়’ বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের চেহারাই বদলে গেছে। আওয়ামী লীগ দেশকে একেবারে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। এখান থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বাংলাদেশ এখন একটা রীতিমতো সংকটজনক অবস্থায় পড়েছে, এ কথা প্রায় সবাই বলছেনÑএমনটা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখান থেকে বেরিয়ে আসা কোনোমতেই সম্ভব হবে নয়, যদি ‘অনির্বাচিত, অবৈধ’ সরকার সরানো না যায়। তারেক রহমান সে পথ দেখাচ্ছেন।

চুরি ও লুট করতে বড় প্রকল্প করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, দেশের মানুষ খেতে পারছে না, ফুটপাতে পড়ে থাকছে, সেদিকে খেয়াল নেইÑতারা এখন পাতালরেল, মেট্রোরেল করছে। দেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা শতকরা ৪২ শতাংশ বেড়েছে। মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে গণমাধ্যমকে একেবারে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এখন সবাই সেলফ সেন্সরশিপ (স্ব-আরোপিত নিয়ন্ত্রণ) করে। এটা দেয়া যাবে, এটা দেয়া যাবে না। ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে একেবারে নিয়ন্ত্রিত করে ফেলা হয়েছে। প্রিন্ট মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হয়েছে। আমাদের একটাই মিডিয়া দলের মুখপত্র ‘দিনকাল পত্রিকা’, সেটিও বন্ধ করে দিয়েছে।’

মির্জা ফখরুল আরও অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্র, স্বাধিকার ও জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ১৯৭৫ সালে তারা ক্ষমতায় আসার পর ১১ মিনিটে গণতন্ত্র ধ্বংস করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেই দিন থেকে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয়তাবাদ বিনষ্টের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে এবং ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানকে হত্যা একই ষড়যন্ত্রের ফসল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এর মূল উদ্দেশ্য তাকে খলনায়ক হিসেবে দেখানো। তার নেতৃত্বের যোগ্যতা নেইÑএ ধরনের কথা তারা প্রচার করতে চায়।

এ সরকার পুরোপুরিভাবে এ দেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে বলে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তারা দুর্নীতি করেছে এত বেশি যে অর্থনৈতিক খাতগুলো ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত লুটপাট করেছে। হাজার কোটি টাকা বাইরে পাচার করেছে। এজন্য রিজার্ভ কমে এসেছে। এত বেশি চুরি করেছে যে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তাদের নেই। তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

ডলার সংকট কেনÑএ প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল জবাবে বলেন, কারণ তারা সব ডলার বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। একই সঙ্গে অর্থনীতি ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। তাদের ভেতরে যে কিছু নেই, পুরোপুরি ফাঁকা, তা প্রমাণিত হয়ে গেছে।

সংবিধান আবার সংশোধনের পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যে বলেন, সংবিধান কাটতে কাটতে ছ্যাড়াবেড়া করে ফেলা হয়েছে। কিছু নেই এর মধ্যে। জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে, তাদের অধিকার নিশ্চিত হয়, এমন সংবিধান তৈরি করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, প্রথমে আঘাত করেছে মিডিয়ার ওপর। কারণ তারা ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারবে না। কারণ এরা মনে করে, দেশটা তাদের তালুকদারি-জমিদারি। দেশের মালিক তারা, বাকিরা সব প্রজা।

মানুষ রাস্তায় নেমেছে, তাই অতি দ্রুত এ সরকারকে সরানো যাবে। মামলা দিয়ে, গুম করে, কোনো কিছুতেই আর তা ঠেকানো যাবে না বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০