নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের লভ্যাংশ প্রদানে আইনগত কোনো বাধা নেই। রিটার্ন আর্নিংস নেগেটিভ হওয়ার পরও গত বছরের জন্য পাঁচ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর ১০ ধারা লঙ্ঘন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাই প্রতিষ্ঠানটির লভ্যাংশ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরে গতকাল রোববার এ বিষয়ে অনাপত্তি দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী রিয়াজ উদ্দিন খান শেয়ার বিজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট অনাপত্তি দিয়েছেন। তবে বার্ষিক সাধারণ সভার বিষয়ে এখনও কোনো আদেশ আসেনি। আর পুরো বিষয়টি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) তদন্ত করার নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে প্রভিশন ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করার অভিযোগে আনোয়ারুল ইসলাম নামের এক শেয়ারহোল্ডার আদালতে রিট আবেদন করলে শুনানিশেষে জুনের মাঝামাঝি সময়ে এজিএম অনুষ্ঠান স্থগিত করে দেন হাইকোর্ট।
প্রভিশন না রেখে মুনাফা বেশি দেখানোর অভিযোগ আনেন বিনিয়োগকারীরা। একইসঙ্গে মুনাফার বিপরীতে লভ্যাংশও ঘোষণা কারায় কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে আবেদন করেন মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, জালিয়াতির মাধ্যমে লভ্যাংশ ঘোষণা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে কোম্পানিটি জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণিত। এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় গতকাল বিএসইসিতে পাঠানো চিঠিতে।
ফার্স্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির মুনাফা জালিয়াতির বিষয়ে দৈনিক শেয়ার বিজসহ কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কপি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে কোম্পানিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টসের মতামতে। নিরীক্ষকের মতে, ঋণের বিপরীতে কোম্পানিটিকে ছয় কোটি ৭০ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬৪ টাকা প্রভিশন রাখতে হতো, কিন্তু তারা তা রাখেনি। পাশাপাশি কোম্পানিটি দুই কোটি ১৯ লাখ ৬১ হাজার ৯২ টাকার ইনকাম ট্যাক্স প্রভিশনও রাখেনি। যদি এ প্রভিশন রাখা হতো তাহলে কোম্পানিটির মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয় মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতো।
পরে প্রভিশন ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করার অভিযোগে আনোয়ারুল ইসলাম আদালতে রিট আবেদন করলে শুনানিশেষে গত ১৪ জুন বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের যৌথ বেঞ্চ এজিএম অনুষ্ঠান স্থগিত করে দেন। একইসঙ্গে বিএসইসিকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেন আদালত। গত ১৫ জুন রাজধানীর ট্রাস্ট মিলনায়তনে কোম্পানিটির এজিএম হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের ডিভিডেন্ড ঘোষণায় জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা এবং কোম্পানি সচিবকে শোকজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি এক চিঠিতে এ তিন কর্মকর্তাকে সাত দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়। পাশাপাশি ফার্স্ট ফাইন্যান্সের অনিয়মের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ শতাংশ ডিভিডেন্ড প্রদানে অনাপত্তি দিলেও আগামী তিন বছরে ২৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা প্রভিশন সংরক্ষণের শর্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে গত ২ জুন থেকে বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড-এর আর্টিক্যাল ২৭-এর নির্দেশনানুযায়ী বেসিস অব অ্যাকাউন্টিং অনুসরণ করে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, ফার্¯¡ ফাইন্যান্সের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীতে মেয়াদি আমানত ৫৫২ কোটি ৮৪ লাখ ৩১ হাজার টাকার বিপরীতে সুদ প্রদানযোগ্য খাতে ১৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু অ্যাকাউন্টিংয়ের বেসিক মান অনুসরণ করা হলে এ খাতে রক্ষিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ আলোচিত খাতে ২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে। রিটার্ন আর্নিং বাড়ানোর লক্ষ্যে এরূপ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ফার্স্ট ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) ও বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএএস) এর আর্টিক্যাল ২৭ লঙ্ঘন করেছে। পাশাপাশি রিটার্ন আর্নিংস নেগেটিভ হওয়ার পরও পাঁচ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর ১০ লঙ্ঘন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
Add Comment