উত্তরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানির চাপে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ হুমকির মুখে পড়েছে। ব্যারাজের পাশে ফ্লাড বাইপাস ভেঙে লালমনিরহাটের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এছাড়া বন্ধ রয়েছে বুড়িমারী স্থলবন্দরের কার্যক্রম। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক ও রেল যোগাযোগ। সৈয়দপুরে শহর রক্ষা বাঁধ ভুল্লিপাড়া ও পাটোয়ারী পাড়া এলাকায় ভেঙে যাওয়ায় শহর প্লাবিত হয়েছে। ভাঙন রোধে পাটোয়ারী পাড়া এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রংপুরে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ হুমকির মুখে পড়েছে। পানির চাপে ব্যারাজের পাশে ফ্লাড বাইপাস ভেঙে যাওয়ায় জেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বুড়িমারী স্থলবন্দরের কার্যক্রম। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক ও রেল যোগাযোগ।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পানি পরিমাপক) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রশীদ জানান, লালমনিরহাটে তিস্তার পানি গতকাল রোববার বিপদসীমার ৬০ সে.মি. ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১১০ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়েও পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস পানি চাপে ভেঙে গেছে। তিস্তা ব্যারাজ স্থাপনের পর এবারই সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী বাজার থেকে তিস্তা ব্যারাজের আনসার ক্যাম্প পর্যন্ত ৫০০ মিটার ফ্লাড বাইপাস মহাসড়ক ভেঙে গেছে। ফলে নীলফামারীর সঙ্গে লালমনিরহাটের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

রেলওয়ের লালমনিরহাট অঞ্চলের সহকারী ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট সাজ্জাত হোসেন জানান, গতকাল রোববার সকালে বন্যার পানির চাপে হাতীবান্ধা উপজেলার মেডিকেল মোড় এলাকায় রেলপথ ভেঙে গেছে। ফলে রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।

জেলা প্রশাসক সফিউল আরিফ জানান, ত্রাণ বিতরণের চেয়ে এখন বন্যাকবলিত এলাকার জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়াই জরুরি হয়ে পড়েছে। এ কাজটিও চলছে, ত্রাণ বিতরণও করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

নীলফামারী ও সৈয়দপুর : সৈয়দপুরে খড়খড়িয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শহর রক্ষা বাঁধের ভুল্লিপাড়া ও পাটোয়ারী পাড়া এলাকায় ১০০ মিটার ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাঁধের ভাঙন রক্ষায় শহরের পাটোয়ারী পাড়া এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা ও বিমানবন্দরের আশপাশ এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় রানওয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আমনসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টিতে শ্রমজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছেন। শহরের পানিবন্দি অনেক মানুষ কয়েকটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বজলুর রশীদ জানান, সেনাবাহিনী, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা যৌথভাবে শহর রক্ষা বাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সহযোগিতা করছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোতে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। বন্যার্তদের শুকনো খাবার ও অর্থ সহায়তা দেওয়ার জন্য তালিকা করা হয়েছে।

বগুড়া : বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রোববার সকালে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গালী, করতোয়া, ইছামতী, সুবিলসহ সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ফলে সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলার নিন্মাঞ্চল তলিয়ে গেছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, যমুনার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও কোনো বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

রংপুর : রংপুর আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ২০৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে অনেক বেশি। এদিকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সদর উপজেলা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, কাউনিয়া, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার শত শত হেক্টর জমির আমন ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

পানির তোড়ে ভেসে গেছে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স ম আশরাফ আলী জানান, এখন পর্যন্ত রংপুরে এক লাখ ৫২ হাজার ৯৪১ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এছাড়া এক হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। তবে কী পরিমাণ জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০