প্রতিনিধি,রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যকার সংঘর্ষে প্রশাসনের গাফিলতি ও পুলিশ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের গুলিবিদ্ধের অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। ২ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহায়তায় মুক্ত হোন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।
রোববার (১২ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের পশ্চিম কোণে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল করলে উপাচার্য উন্মুক্ত আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে সাবাশ বাংলাদেশ মাঠে বসার আহবান জানান। কিন্তু বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল (বিনোদপর গেইট) গিয়ে আলোচনায় বসতে বলে। এতে উপাচার্য সম্মত না হলে উপাচার্যকে ভিতরে রেখে শিক্ষার্থীরা চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। প্রায় দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকেন উপাচার্য। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে তার বাস ভবনে পৌঁছে দিয়ে আসেন।
প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীদেরকে হলে ফিরে যেতে দেখা যায়।
এর আগে সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থী। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবরোধ করে আন্দোলন করেন।
এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জড়ো করেছেন আন্দোলনরতরা। মিছিলে শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে হলের মসজিদের মাইকে আহ্বান জানাতেও দেখা গেছে।
এসময় বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে উত্তপ্ত করে তুলেন ক্যাম্পাস। এ বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা যোগদান করছেন। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল করে উপাচার্যের বাসভবনে সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন।
উল্লেখ, বাসের ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর বাজারে স্থানীয়-শিক্ষার্থী ঘটনার সূত্রপাত হয়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে স্থানীয়রা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বর্তমানে মহাসড়কের দুপাশ থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়ে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে অবস্থান নেয়।
সংঘর্ষে আহত হয়ে প্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে একটি বাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ নামের এক ছাত্র। যাত্রাপথে ভাড়া নিয়ে তার সঙ্গে বাসের সুপারভাইজার ও হেলপারের বাগবিতণ্ডা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে বাস থেকে কাউন্টারে এসে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।