ডাইনিংয়ে দাম বাড়লেও বাড়েনি খাবারের মান

প্রতিনিধি, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে দামের তুলনায় মান বাড়েনি। নি¤œমানের খাবার নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো হলের ডাইনিংয়ে ভাতের সঙ্গে এক পিস মাছ বা মাংস দিয়ে খেলেই বিল আসে ৪০-৪৫ টাকা। সময়ের সঙ্গে যেমন বেড়েছে দাম, কমেছে পরিমাণও। এক কেজি মুরগির মাংস করা হয় ২০-২৫ পিস। আর মাছের ক্ষেত্রে যত ছোট পিস করা যায়। হল ডাইনিংয়ের এ চড়া মূল্য তালিকা ও খাবারের পরিমাণ স্বল্পতায় হাঁসফাঁস অবস্থা আবাসিক শিক্ষার্থীদের। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলাতে না পেরে অর্ধাহারে দিন কাটচ্ছেন দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থী।

সরেজমিন গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ডাইনিংয়ে ঝুলানো মূল্য তালিকায় দেখা যায়, প্রতি প্লেট ভাত ৮ টাকা, মাছ ভর্তা ১০ টাকা, সবজি ২০ টাকা, মাছ ৩০ টাকা, মুরগি ৩০ টাকা। অর্থাৎ এক টুকরো মাছ বা মুরগির মাংস এবং ভর্তা দিয়ে এক প্লেট ভাত খেতে সর্বনি¤œ খরচ হয় ৪৮ টাকা। একটি ডিম ও ভর্তা দিয়ে খেতে খরচ পড়ে ৩৮ টাকা।

ডাইনিংয়ের এ খাবার দিয়ে শিক্ষার্থীদের পুষ্টিচাহিদা না মিটলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই এ খাবার খাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবেল বলেন, খেতে গেলে আগে দীর্ঘক্ষণ মূল্য তালিকার দিকে তাকিয়ে থেকে দেখি সস্তা মূল্যের খাবার কী আছে। তাছাড়া আর উপায় কী! আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মাসে ৪ হাজার টাকার মধ্যে আমার চলতে হয়। পর্যাপ্ত আমিষসমৃদ্ধ খাবার খেতে চাইলে এক বেলায় সর্বনি¤œ ৭০ টাকা খরচ করতে হয়। যেটি বহন করা আমার পক্ষে অসম্ভব।

কেউ কেউ বদলে ফেলেছেন খাদ্যাভ্যাস। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী মশিউর রহমান (ছদ্মনাম)। সকালে ক্লাস না থাকলে ঘুম থেকে ওঠেন দেরিতে, যাতে সকাল ও দুপুরের খাবার একবারেই সেরে নেয়া যায়। মশিউরের মতো আরও অনেক শিক্ষার্থীর রুটিন এটি।

পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ৩০ গ্রামের একটি রুটিতে থাকে ৭০ থেকে ৭৫ ক্যালরি, একটি ডিমে ৯০ ক্যালরি, ১০০ গ্রাম মিক্সড সবজিতে ৫০ ক্যালরি, ৬০ গ্রাম ভাতে ৭৫ থেকে ৮০ ক্যালরি, ৩০ গ্রাম মাছে ৪০ ক্যালরি, ৩০ গ্রাম মুরগিতে ৪০ থেকে ৬০ ক্যালরি, ৩০ গ্রাম ডালে ১০০ ক্যালরি। গবেষণা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীরা দৈনিক যে খাবার খান তাতে পুষ্টির পরিমাণ গড়ে ১ হাজার ৮২১ কিলোক্যালরি। অথচ পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর দিনে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার কিলোক্যালরি গ্রহণ করা উচিত। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসবের দিকে নজর দিতে নারাজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহা হলের খাবারের পুষ্টিমান ঠিক আছে দাবি করে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্যের কোনো ভর্তুকি নেই। হলের দায়িত্ব হচ্ছে খাবারের ব্যবস্থা করা এবং দাম ঠিক রাখা। বাইরের তুলনায় আমাদের এখানে কম মূল্যে খাবার সরবরাহ করা হয়। কারও যদি অর্থনৈতিক সংকট থাকে তাহলে হয়তো খাদ্যের জোগানের ঘাটতি হতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ডাইনিংয়ে ভর্তুকি নেই এই কথাটি ঠিক না। বাবুর্চির বেতন, রান্নার আসবাবপত্র, প্লেট, গ্লাস এগুলোর ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকে। যদি ভর্তুকি না থাকত তাহলে এই খাবার আরও বেশি দামে খেতে হতো। খাদ্যের পুষ্টিমান নিশ্চিতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাইনিং ব্যবস্থাপনার যারা আছেন তারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০