স্টেরিওট্যাকটিক রেডিওসার্জারি নামটা শুনে মনে হয়, এটা বুঝি অস্ত্রোপচার। আসলে তা নয়, এটা একধরনের রেডিওথেরাপি চিকিৎসা। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে যারা রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, তারা রেডিওলজিস্ট ও নিউরোসার্জনদের সঙ্গে সমন্বয় করে এ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
স্টেরিওট্যাকটিক রেডিওসার্জারি বিশেষ কৌশল বা টেকনিকের মাধ্যমে থ্রি-ডাইমেনশনাল ইমেজ বা ছবি ব্যবহার করে, যেখানে আমরা রেডিওথেরাপি দিতে চাই, সেখানে খুব সূক্ষ্মভাবে অনেক বেশি ডোজের রেডিয়েশন দেয়া হয়। পাশাপাশি আশপাশের যে স্বাভাবিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রয়েছে, সেগুলোকে রক্ষা করা হয়। এই রেডিয়েশনের টেকনিক সাধারণ (কনভেনশনাল) যে রেডিয়েশনের টেকনিক রয়েছে, তার মতোই ক্যানসারের বা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। রেডিওসার্জারির মাধ্যমে যে রেডিয়েশন দেয়া হয়, সেটা মস্তিষ্ক কিংবা আমাদের মেরুদণ্ডের যে হাড় রয়েছে, সেখানে সাধারণত একটি সেশনের মাধ্যমে দেয়া হয়। এ কারণে এর নামকরণ হয়েছে সার্জারি। কিন্তু যকৃৎ, ফুসফুস বা অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড টিউমারসহ অন্যান্য ক্যানসারের ক্ষেত্রে সাধারণত তিন থেকে পাঁচ সেশনের মাধ্যমে রেডিওসার্জারি দেয়া হয়, যাকে বলা হয় স্টেরিওট্যাকটিক বডি রেডিওথেরাপি।
কীভাবে কাজ করে
স্টেরিওট্যাকটিক রেডিওসার্জারির কাজ করার ধরন অনেকটা সাধারণ রেডিওথেরাপির মতোই। কিন্তু এখানে বিশেষ ধরনের কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে খুব ছোট্ট জায়গায় টার্গেট করে অনেক বেশি ডোজে রেডিয়েশন থেরাপি দেয়া সম্ভব। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রেডিওসার্জারি চিকিৎসায় সাধারণ রেডিওথেরাপির চেয়ে কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
স্টেরিওট্যাকটিক রেডিওসার্জারিতে কোনো কাটাছেঁড়া করা হয় না। এই চিকিৎসা দেয়ার জন্য রোগীকে অজ্ঞান করারও প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ রেডিওথেরাপিতে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে, যেমন কিছুটা অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে খাওয়ার অরুচি, বমির ভাবÑএ জাতীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্টেরিওট্যাকটিক রেডিওসার্জারির ক্ষেত্রেও হতে পারে। তবে রেডিওনেক্রোসিস নামে একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রেডিওসার্জারি দেয়ার পর কিছুসংখ্যক রোগীর হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ রয়েছে। বাংলাদেশেও রয়েছে স্টেরিওট্যাকটিক রেডিওসার্জারির মতো অত্যাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা।
ডা. আরমান রেজা চৌধুরী
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ
কনসালট্যান্ট, রেডিয়েশন অনকোলজি, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা