নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে গতকাল বুধবারের লেনদেন পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। তবে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। এদিন ফ্লোর প্রাইসের কারণে দুই শতাধিক কোম্পানির শেয়ারের দাম কমা সম্ভব নয়, এমন পরিস্থিতিতেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমেছে ১৮ পয়েন্টের বেশি। দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তুলনায় দর হারানো কোম্পানির সংখ্যা ছিল পাঁচ গুণের বেশি। এর মধ্যে লেনদেনও বেড়েছে। ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয় চাপ ছিল বেশি। আবার যেগুলোর দর বেড়েছে, সেগুলোর দর বৃদ্ধির হার তুলনামূলক কম। কিন্তু যেগুলোর দর কমেছে, শতকরা হারে কমেছে অনেক বেশি।
আগের সপ্তাহে পুঁজিবাজার মোটামুটি স্বস্তিতে ছিল। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া ১৬৯টি কোম্পানির সর্বনি¤œ মূল্য আবার ফিরিয়ে আনার পর শেয়ারদর ও সূচকে কেবল উত্থান হয়নি, লেনদেনও বেড়েছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহের প্রথম দিনই ২৫ পয়েন্ট দরপতনে স্পষ্ট হয়, বাজার নিয়ে আস্থা ফেরেনি। গতকাল সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে পতনেও বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে শুধু খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ার। এদিন শুধু এ খাতটিতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার চাপ ছিল। ফলে আলোচিত খাতে শেয়ারদর বেড়েছে। একই সঙ্গে খাতটি লেনদেনের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। অপরদিকে চার খাত ছাড়া বাকি সব খাতের শেয়ারদর কমেছে। এদিন শেয়ারদর বেশি কমেছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের শেয়ারে।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের সংস্কার দরকার। গভর্নেন্স ঠিক করতে হবে। মার্জিন ঋণ, ফোর্সড সেলÑএসব বিষয়ে নীতিমালা যুগোপযোগী করতে হবে। দেখা যায়, বাজার একটু উঠলেই ফোর্সড সেল চলে আসে। তাই মার্জিন রেগুলেশন পাল্টাতে হবে বলে জানান তারা।
তারা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস না তুললেও ফোর্সড সেল আসবেই। একবার ফোর্সড সেল এলে সেটা আসতেই থাকবে। এ বিষয়ে নীতিমালা সুনির্দিষ্ট থাকা দরকার। এছাড়া অনেকে আস্থার অভাবে বিনিয়োগ করছেন না। দেখা যায়, দুই দিন বাড়লে তিন দিন কমে। আবার কোথায় গিয়ে থামবে, সে বিষয়েও কোনো ধারণা নেই। ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনলেও বিক্রি করা সম্ভব হয় না। তাই এ জন্য বাজার স্বাভাবিক হতে পারছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল আগ্রহ বেশি থাকা খাদ্য খাতের শেয়ারদর বেড়েছে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। এদিন খাতটিতে মোট ২১টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া শেয়ারের ৩টির দাম বেড়েছে এবং ৯টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। এদিকে গতকাল টেলিকমিউনিকেশন, ব্যাংক, সিমেন্ট এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাতের শেয়ারদর কমার বা বৃদ্ধির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
গতকাল শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি কমেছে ভ্রমণ খাতে। এ খাতে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে। খাতটিতে মোট ৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে এবং ২টির অপরিবর্তিত ছিল। ২ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ারদর কমে কাগজ ও মুদ্রণ খাত দ্বিতীয় স্থানে ছিল। শেয়ারদর কমার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে ছিল আইটি খাত। খাতটিতে ১ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে।
অপরদিকে গতকাল লেনদেনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিমা খাতে। খাতটিতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৬ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইটি খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ লেনদেন হওয়া ওষুধ ও রসায়ন খাত রয়েছে তৃতীয় স্থানে। চতুর্থ স্থানে থাকা খাদ্য খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ১০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসইতে ৬০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৫৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৮ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২১৩ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ২ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট ও ডিএসইএস সূচক ১ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২১৫ দশমিক ১৭ পয়েন্টে ও ১ হাজার ৩৫৩ দশমিক ৭২ পয়েন্টে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০৬টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২১টি এবং কমেছে ১১০টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ১৭৫টির।
অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবসে ৭ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৭০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৪টি, কমেছে ৫০টি এবং পরিবর্তন হয়নি ১০৬টির।
এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪০ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৫১ পয়েন্টে। সিএসই-৫০ সূচক দশমিক ২৬ পয়েন্ট সিএসআই দশমিক ৮৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩২১ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে, ১০ হাজার ৯৯৯ দশমিক ৭৬ পয়েন্টে ও ১ হাজার ১৫৫ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ২ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩৩৩ দশমিক ১৮ পয়েন্টে।