কাজী সালমা সুলতানা: দেশব্যাপী চলমান অসহযোগ আন্দোলনের এই দিনে ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত ঘটে গাজীপুরে। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে গাজীপুরবাসী। সশস্ত্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালি, তারা নেমে পড়েছিল সম্মুখযুদ্ধে। জনতার সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা আজকের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। আ ক ম মোজাম্মেল ছিলেন সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক। আ ক ম মোজাম্মেল হক সে সময়ে ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা এবং ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গড়ে তোলা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য। ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে এ সংগঠন গড়ে তোলা হয়। এ পরিষদের লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা।
১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ, শুক্রবার। আকস্মিকভাবে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল জয়দেবপুরে (গাজীপুর) দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করতে আসে। রেজিমেন্টের এক নায়েব সুবেদার জয়দেবপুর হাইস্কুলের মুসলিম হোস্টেলের পুকুরে (জকি স্মৃতি প্রাইমারি স্কুলের সামনে) গোসল করার সময় জানান যে, ঢাকা থেকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব এসেছেন। এ সংবাদ পেয়ে শিমুলতলী, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, ডিজেল প্লান্ট ও সমরাস্ত্র কারখানার শ্রমিকদের খবর দেয়া হয় জয়দেবপুর চলে আসার জন্য। খবর পেয়ে হাজার হাজার শ্রমিক দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে চলে আসে।
জয়দেবপুর রেলগেটে মালগাড়ির বগি, রেলের অকেজো সিøপারসহ বড় বড় গাছের গুঁড়ি, কাঠ, বাঁশ, ইট ইত্যাদি দিয়ে এক ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়। জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আরও পাঁচটি ব্যারিকেড দেয়া হয়, যাতে পাকিস্তানি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে ঢাকায় ফিরতে না পারে। দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন মেজর কে এম সফিউল্লাহ। তিনি স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীর প্রধান হন। এ সময় মেজর সফিউল্লাহ রেশন নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে একটি কনভয় নিয়ে জয়দেবপুর ফিরছিলেন। ওই রেশনের গাড়িও আটকে দেয় বিদ্রোহী জনতা। সেই কনভয়ে থাকা পাঁচ সৈন্যের চায়নিজ রাইফেল কেড়ে নেয়া হয়।
ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব এসে রেলগেটের ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলার জন্য দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলের সৈনিকদের নির্দেশ দেন। কৌশল হিসেবে বাঙালি সৈন্যদের সামনে দিয়ে পেছনে পাঞ্জাবি সৈন্যরা অবস্থান নেয় এবং মেজর সফিউল্লাহকে জনতার ওপর গুলিবর্ষণের আদেশ দেয়া হয়। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জনতার ওপর গুলি না করে আকাশের দিকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে সামনে আসতে থাকে। জনগণ বর্তমান গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ওপর অবস্থান নিয়ে বন্দুক ও চায়নিজ রাইফেল দিয়ে সেনাবাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীও গুলিবর্ষণ করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে জয়দেবপুরে শহিদ হন নেয়ামত ও মনু খলিফা। আহত হন চতরের সন্তোষ, ডা. ইউসুফসহ শতাধিক মানুষ। পাকিস্তানি