আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানি জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেডের ২০২১-২২ হিসাববছরে ব্যবসা পরিচালনা করা বা টিকিয়ে রাখা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক। এছাড়া ব্যবসা ও মুনাফায় ধসসহ নেতিবাচক ইকুইটিতে আছে কোম্পানিটি। ফলে ক্ষতি ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে বিনিয়োগকারীদের। তাই কোম্পানির সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বৈঠক করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আজ বুধবার এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সভাপতিত্ব করবেন। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি চিঠি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠিয়েছে কমিশন।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, অপারেটিং পারফরম্যান্সের অবনতির কারণে কোম্পানিটি ব্যাপক পুঞ্জীভূত লোকসানের পাশাপাশি নেতিবাচক ইকুইটিতে রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ ও ক্ষতি বৃদ্ধি করছে। তাই কোম্পানিকে আজ বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনের সভা কক্ষে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান সভায় সভাপতিত্ব করবেন। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও কোম্পানি সচিবকে সভায় অংশ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় শ্যামপুর সুগার মিলসের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এবং কোম্পানি সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএসইসি। সভায় একইভাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সভাপতিত্ব করবেন।
এদিকে জিল বাংলা সুগার মিলসের ব্যবসা পরিচালনা করা বা টিকিয়ে রাখা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক। কোম্পানিটির ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানিটির নিট সম্পদ ঋণাত্মক ও পুঞ্জীভূত লোকসানে রয়েছে (রিটেইন আর্নিংস)। কোম্পানিটি কয়েক বছর ধরে মুনাফা করতে পারছে না। এতে কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকায়। আর মোট সম্পদের চেয়ে দায় বেশি হয়েছে ৫৪৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ পরিস্থিতিতে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২১ টাকা ২৫ পয়সা। গত বছর একই সময় লোকসান হয়েছিল ১৯ টাকা ৯৬ পয়সা। গত ৩০ জুন, ২০২২ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় (এনএভিপিএস) ছিল ৯২৬ টাকা ৯৫ পয়সা।
জিল বাংলা সুগার মিলস গত ৩০ জুন, ২০২২ সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। আলোচিত বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ৮৮ টাকা ২৭ পয়সা। আগের বছর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১১৫ টাকা ৯৭ পয়সা।
অপরদিকে গত বছরের ২ ডিসেম্বর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান প্রধান অতিথি হিসেবে জিল বাংলা চিনিকলের ৬৫তম মাড়াই মৌসুম উদ্বোধন করেন। টানা ৯০ দিন মিলটির মাড়াই অব্যাহত থাকার কথা থাকলেও কৃষকরা আখ না দেয়ায় মাত্র ৩৯ দিনের মাথায় মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বি হাসান ১১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টায় জিল বাংলা চিনিকলের ২০২২-২৩ আখ মাড়াই মৌসুমের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এছাড়া প্রতিষ্ঠার শুরুতে মিলের আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা ৭০ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন ও চিনি উৎপাদনের সক্ষমতা পাঁচ হাজার ১৫৩ মেট্রিক টন থাকলেও কাঁচামাল সংকট, ঋণের বোঝা ও পুরোনো যন্ত্রাংশের কারণে বর্তমানে তা নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
কোম্পানিটি ২০১৬-১৭ মৌসুমে ৭৮ দিনে ৬২ হাজার ৪৩৪ দশমিক ৭৪ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি আহরণ করে চার হাজার ৬৬৯ মেট্রিক টন। চিনি আহরণের শতকরা হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ১০২ দিনে ৮৩ হাজার ৩৫৩ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করা হয় পাঁচ হাজার ৬০৮ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। এ সময় চিনি আহরণের হার ছিল ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১০১ দিনে ৮৩ হাজার ৫০৪ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করা হয় পাঁচ হাজার ২২২ মেট্রিক টন, যাতে চিনি আহরণের শতকরা হার ছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ মৌসুমে ৮৫ দিনে ৭০ হাজার ৬৮৯ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন হয় পাঁচ হাজার ১৫৩ মেট্রিক টন, যার মধ্যে চিনি আহরণের শতকরা হার ছিল ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। সবশেষ ২০২১-২২ মৌসুমে ৪৪ দিনে ৩৫ হাজার ৬৯৮ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করা হয় মাত্র দুই হাজার ৪৯৮ মেট্রিক টন। এ সময় চিনি আহরণের হার ছিল মাত্র সাত শতাংশ।