ভাষা আন্দোলনের প্রথম ভাষাসৈনিক, আইনজীবী, সমাজকর্মী রাজনীতিবিদ শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হত্যাবার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পাকসেনাদের হাতে পুত্রসহ তিনি আটক, নির্মম নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। তিনি ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু এবং ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে গণপরিষদের কার্যবিবরণীর ভাষার মর্যাদা দানের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। ভাষা আন্দোলনের পুরো সময়জুড়ে গণপরিষদের ভেতরে ও বাইরে তিনি বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রামরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০৪ সালে নবীনগর হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯০৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯১০ সালে একই কলেজ হতে বিএল পরীক্ষা পাস করেন। তিনি প্রায় এক বছরকাল কুমিল্লার মুরাদনগর বাঙ্গুরা উমালোচন হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯১১ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা আদালতে যোগদান করেন। ১৯৩৬ সালে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণসামগ্রী বিতরণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন, ১৯২০ সালের অসহযোগ আন্দোলন এবং ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৩৭ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ব্রিটিশবিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়ে বিনাশ্রম ও সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি কংগ্রেসের পক্ষে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য পূর্ববঙ্গ থেকে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৪৭ সালের পর একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিক হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার তার উপর ‘এবডো’ (ঊষবপঃরাব ইড়ফরবং উরংয়ঁধষরভরপধঃরড়হ ঙৎফবৎ) প্রয়োগ করে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তিনি গৃহবন্দি হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তার পুত্র দিলীপকুমার দত্তকে ধরে নিয়ে যায় এবং ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে নির্মম অত্যাচার করে হত্যা করে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে তাকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করে।
কাজী সালমা সুলতানা