নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস এবং যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মাহবুব আলম লাবলুর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় সরকার জনগণকে একটি ‘বার্তা’ দিতে চেয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী দেশবাসীর কাছে বার্তা দিতে চায় যে, সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করা যাবে না, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করা যাবে না।’
গতকাল এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। সেখানে তিনি অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানান। ফখরুল বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত। গণমাধ্যমের কণ্ঠকে নিস্তব্ধ করার জন্যই এই কালো আইনকে ব্যবহার করে চূড়ান্ত দমন চালানো হচ্ছে। মতিউর রহমান সাহেবের মতো দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা সম্পাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে সরকার প্রমাণ করল যে, তারা গণতন্ত্রকে চিরদিনের জন্য কবরস্থ করতে চায়।’
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেখানে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’
ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জš§ দেয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তর টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদনও প্রচার করা হয়। পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের স্যোশাল মিডিয়ায় দেয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।
এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে তেজগাঁও থানায় শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন এক যুবলীগ নেতা। বুধবার সকালে খবর আসে, শামসকে তার সাভারের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘সিআইডি’ পরিচয় দিয়ে। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ঢাকার আদালতে তোলা হয়।
বুধবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করেন আইনজীবী মশিউর মালেক। সেখানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ‘হুকুমের আসামি’ এবং নাম উল্লেখ না করে একজন ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যানকে’ আসামি করা হয়।
অপরদিকে ‘দুবাই ফেরত চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী বাবর বাহিনীর দাপট, শাহ আলম সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি রেল’ শিরোনামে প্রতিবেদনের জন্য দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মাহবুব আলম লাবলুর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবির অভিযোগটির তদন্ত করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
ফখরুলের অভিযোগ, গণমাধ্যমের ‘কণ্ঠ স্তব্ধ করতে’ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দাবি করছি, অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, সাংবাদিক মতিউর রহমান, মাহবুব আলম লাবলু ও শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’
সরকারের ‘ইশারাতেই’ এসব মামলা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশব্যাপী সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের ফলে গণমাধ্যমসহ গোটা দেশে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একদলীয় বাকশালী কায়দায় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের ওপর নির্বিচার দমন-পীড়ন চালিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ভয়াবহ দুঃশাসন চালিয়ে যাচ্ছে।’