ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সমালোচক হাসান হাফিজুর রহমান। তাকে পূর্ব বাংলায় আধুনিক কাব্য আন্দোলনের অন্যতম স্থপতি বলা হয়। তারই সম্পাদনায় ১৬ খণ্ডে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র (১৯৮২-৮৩) প্রকাশিত হয়।
হাসান হাফিজুর রহমান ১৯৩২ সালের ১৪ জুন জামালপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (১৯৫১ সালে) বিএ এবং (১৯৫৫ সালে) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে সওগাত, ইত্তেহাদ, পাকিস্তান পত্রিকা এবং স্বাধীনতার পর দৈনিক বাংলা পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত দুবার তিনি জগন্নাথ কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। পাকিস্তানি শাসকচক্র কর্তৃক বাংলা বর্ণমালা ও বানান সংস্কার এবং পাকিস্তানের আদর্শ পরিপন্থি বলে রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধের চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে তিনি অংশ নেন। তিনি ১৯৭৩ সালে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি সরকারের সংস্থাপন শাখায় যোগদান করেন এবং ১৯৭৮ সালে তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ প্রকল্পের পরিচালক নিযুক্ত হন।
হাসান হাফিজুর রহমান ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং সে বছরই তার বিখ্যাত কবিতা ‘অমর একুশে’ রচনা করেন। ১৯৫৩ সালে তার সম্পাদনায় ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রথম সংকলন গ্রন্থ একুশে ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। ১৯৪৬ সালে তার প্রথম রচনা একটি ছোটগল্প ‘অশ্রুভেজা পথ চলতে’ সওগাত পত্রিকায় ও প্রথম কবিতা ১৯৪৯ সালে সোনার বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি বাঙালি কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে অবিচল আস্থাশীল ছিলেন। তার রচিত মৌলিক গ্রন্থগুলোর মধ্যে বিমুখ প্রান্তর, আধুনিক কবি ও কবিতা, আর্ত শব্দাবলি, আরও দুটি মৃত্যু, মূল্যবোধের জন্য, যখন উদ্যত সঙ্গীন, শোকার্ত তরবারী উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সওগাত সাহিত্য পুরস্কার ও নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক এবং একুশে পদক। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
Ñকাজী সালমা সুলতানা