ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের পরও ডলার সংকট কাটেনি। ডলারের বিনিময় মূল্য বারবার রেকর্ড করেছে, ভেঙেছে। খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২০ টাকাও হয়েছে।
ডলার সংকট মোকাবিলায় কারসাজি বন্ধে এবং মানি খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানীর বিভিন্ন মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। যারা রাস্তার পাশে ডলার কেনাবেচা করতেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের ভয়ে তারাও সরাসরি কেনাবেচা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আকস্মিক পরিদর্শন কার্যক্রমও ছিল। তবে এসব প্রয়াসের তেমন সুফল দেখা যায়নি। এরপর দেশে কাজ করা দেশি-বিদেশি ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের অব্যাহত দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবু ডলারের বাজার ছিল অস্থিতিশীল। ট্রেজারি বিভাগ ব্যাংকের টাকা ও ডলারের জোগান ও চাহিদার বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে।
ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ডলারের বাজার অস্থিতিশীল করে অতিরিক্ত মুনাফা করায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক ডলার কেনাবেচা করে এক মাসে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, গত এক দশকে একসঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের ছয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে ২০০২ সালে ব্যবসায়ী ওম প্রকাশ আগরওয়াল জালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচটি ব্যাংক থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ওই ঘটনায় তখন একসঙ্গে পাঁচ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) সরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এবার জানা গেল, ডলার কেনাবেচায় কারসাজির অভিযোগ ওঠায় ১০ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল শেয়ার বিজের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ভাষ্য: দেশে ডলার-সংকট মোকাবিলায় ডলারের অভিন্ন দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ১০টি ব্যাংক আগ্রাসীভাবে ডলার কেনাবেচা করছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে যাতে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা না করে; সে বিষয়ে সব ব্যাংকের এমডিকে সতর্ক করা হয়েছে। ডলারের ওপর চাপ কমাতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ, কয়েকটি পণ্য আমদানিতে ব্যাংকঋণ বন্ধ এবং ব্যাংকগুলোর খরচ কমাতে গাড়ি কেনা বন্ধসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এগুলোর যথারীতি পরিপালন, ব্যাংকগুলোর ওপর কড়াকড়ির পাশাপাশি মানি চেঞ্জারের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে কি না, তাও নজরদারি করতে হবে।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে কিংবা ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, সংগতও। কেননা ডলার দেশীয় পণ্য নয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা। কিন্তু মুনাফার জন্য আগ্রাসীভাবে ডলার বিনিময় হারে সংঘবদ্ধ কারসাজি গ্রহণযোগ্য নয়। যেসব ব্যাংক আইন মেনে ব্যবসা করবেÑ সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠায় শূন্য সহনশীলতায় কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। বিনিময় হার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছেই। ঘোষিত দর ব্যাংকগুলো অনুসরণ করছে কি না, তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হলে এবং সংশ্লিষ্টরা দায়িত্বশীল হলে স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রা বাজার তৈরি করা সম্ভব।