নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারের ঋণাত্মক মূলধনধারী (নেগেটিভ ইকুইটি) বিনিয়োগ হিসাবের তালিকায় রয়েছে ৩২টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ১০৮টি ব্রোকারেজ হাউজ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তৈরি করা তালিকায় এসব প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের হিসাবধারীদের শেয়ার কেনাবেচার প্রান্তিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শর্তে এক বছর তিন মাস সময় বাড়িয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কমিশন।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ৩২টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ১০টি ব্রোকারেজ হাউজে বর্তমানে নেগেটিভ ইকুইটির পরিমাণ প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার বেশি; যা বিগত কয়েক বছর এর পরিমাণ আরও বেশি ছিল। এ ধরনের হিসাবে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত লেনদেনের সময়সীমা ছিল। গতকাল সময়সীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিএসইসি। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে শর্তের মধ্যে রয়েছে, ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে ঋণাত্মক মূলধনধারী বিনিয়োগ হিসেবে শেয়ার কেনাবেচার প্রান্তিক প্রতিবেদন তিন মাস পরপর জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে তারা কীভাবে এটি কমিয়ে আনতে পারে, তার কর্মপরিকল্পনা দিতে হবে। প্রান্তিক শেষ হওয়ার প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দিতে হবে।
বিএসইসির তালিকার শীর্ষে রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘পিএফআই সিকিউরিটিজ’। প্রতিষ্ঠানটির মার্জিন ঋণ হিসাবে মূলধনি লোকসান প্রায় ৮৫ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির মূলধন লোকসান প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা। রিলায়েন্স ব্রোকারেজের রয়েছে সাড়ে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি।
এছাড়া ব্যাংক এশিয়া ও আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা, ফারইস্ট স্টক অ্যান্ড বন্ডের ২৫০ কোটি টাকা, আইসিবি সিকিউরিটিজ, ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজ ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজের প্রতিটিতে মূলধন লোকসান প্রায় ২০০ কোটি টাকার ওপর। আর ১৫০ কোটি টাকার বেশি মূলধন লোকসান রয়েছে আইএফআইসি সিকিউরিটিজের।
জানা গেছে, ২০১০ সালের পরে যেসব বিও হিসাব ঋণাত্মক হয়েছিল; পুঁজিবাজার গতিশীল ও ভালো অবস্থানে আসার কারণে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের মূলধন আদায় হয়েছে। তবে সুদের টাকা এখনও পাওনা রয়েছে। ঋণাত্মক হিসাব কমিয়ে আনার তালিকায় রয়েছেÑএআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস, মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ, সিটি ব্রোকারেজ, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ, এমটিবি সিকিউরিটিজ ও এবি ব্যাংক সিকিউরিটিজ।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর ৩(৫) ধারা অনুযায়ী কোনো বিনিয়োগকারীর ডেবিট ব্যালান্স ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে ওই হিসাবে শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু ২০১০ সালের ধস-পরবর্তী বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় কয়েক দফা ধারাটির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নতুন করে স্থগিতাদেশের জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিএসইসির বৈঠকে ওই ধারাটির কার্যকারিতা ছয় মাস স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়, যা ১৮ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা। এরপর নতুন করে আরও সময় বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রতিনিধিরা মার্জিন রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারা শিথিল করে ফের সময় বাড়ানোর আবেদন করে। গত রোববার এ আবেদন নিয়ে বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়। যেখানে ডিএসই, ডিবিএ ও বিএমবিএ সবাই মার্জিন রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারা শিথিল করে আবারও এক বছর বাড়তি সময়ের জন্য আবেদন করে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজ শেয়ার কেনার জন্য গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে থাকে, যা মার্জিন ঋণ নামে পরিচিত। এ ধরনের গ্রাহকের হিসাবকে বলা হয় মার্জিন অ্যাকাউন্ট। ২০১০ সালে সূচকের বড় ধসের পর শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় অনেক অ্যাকাউন্টের অবস্থা এমন হয় যে, গ্রাহকের সব শেয়ারের বাজারদর তার নেওয়া ঋণের চেয়ে কম। গ্রাহকের মূলধন ঋণাত্মক মূলধনে পরিণত হয়।
Add Comment