ঐতিহাসিক প্রতœতত্ত্ববিদ, লিপিতত্ত্ব ও প্রাচীন হস্তলিপি বিষয়ের পথপ্রদর্শক এবং সাহিত্যিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১৩৮তম জš§দিন আজ। আর. ডি. ব্যানার্জি নামে তিনি অধিক পরিচিত। ১৯২২ সালে তিনি হরপ্পা সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র মহেঞ্জোদাড়ো পুনরাবিষ্কার করেন। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৮৫ সালের ১২ এপ্রিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জš§গ্রহণ করেন। তিনি ১৯০৭ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাস বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯১০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১০ সালে তিনি কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরের প্রতœতাত্ত্বিক বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা এবং ১৯১১ সালে ভারতের প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯১৭ সালে প্রতœতাত্ত্বিক তত্ত্বাবধায়ক পদে তিনি পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯২৮ সালে তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৩০ সালের ৩০ মে পর্যন্ত এ পদে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন। রাখালদাস ভারতীয় সভ্যতার সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক। তিনি মহেঞ্জোদারো সভ্যতার সুপ্রাচীন ধংসাবশেষ ও বাংলায় পাল রাজবংশ সম্পর্কিত বহু তথ্য তিনি আবিষ্কার করেন। পাহাড়পুরে খননকাজের পরিচালক ছিলেন তিনি। মুদ্রাসম্বন্ধীয় বিষয়ে ভারতবর্ষে বাংলাতে প্রথম গ্রন্থ রচনা করেন তিনি। রাখালদাস ১৪টি গ্রন্থ, ৯টি উপন্যাস এবং বাংলা ও ইংরেজিতে তিনশরও বেশি প্রবন্ধ রচনা করেন। প্রাচীন হস্তলিপি বিদ্যা ও লিপি উৎকীর্ণ বিদ্যায় রাখালদাসের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। ১৯১৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাকর ‘জুবিলী গবেষণা পুরস্কার’ লাভ করেন। তিনিই প্রথম আদি বাংলা লিপির প্রতি পণ্ডিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস পুনর্গঠনে আদি বাংলা লিপির গুরুত্ব তুলে ধরেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ এর জাদুঘরে সংরক্ষিত ভাস্কর্য ও মুদ্রার ক্যাটালগের মুখবন্ধ রচনা করেন তিনি। রাখালদাস প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাস সম্পর্কিত কলা, স্থাপত্য গবেষণায় অনবদ্য অবদান রাখেন। উপমহাদেশের শিল্পকলার ওপর তিনি বাংলায় ৬টি মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন। প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগে চাকরির শেষ দুই বছরে রাখালদাস বাংলা ও আসামে ব্যাপক ভ্রমণ করেন। এ সময় তিনি মহাস্থানগড় ও ঘোড়াঘাট অঞ্চলে অনুসন্ধান চালান এবং মুর্শিদাবাদ ও ঢাকার ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো পরীক্ষা করেন। তাঁর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ; বাংলার ইতিহাসের ওপর দুখণ্ডে লিখিত বাঙ্গালার ও উড়িষ্যার ইতিহাস, শশাঙ্ক, ধর্মপাল, করুণা, ময়ূখ, অসীম, লুৎফ-উল্লা, ধ্রুব, পাষাণের কথা, অনুক্রম, হেমকণা প্রভৃতি।
কাজী সালমা সুলতানা