সর্বশেষ তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করছে জার্মানি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: নিজেদের শেষ তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামীকাল শনিবার বন্ধ করতে যাচ্ছে জার্মানি। এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি দিয়ে চাহিদা পূরণের উচ্চাকাক্সক্ষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর বাজি ধরতে যাচ্ছে দেশটি। ২০০৩ সাল থেকে দেশটিতে ১৬টি চুল্লি বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেবে দেশটি। খবর: ডয়চে ভেলে ও স্কাই নিউজ।

অবশ্য এ উদ্যোগের বিরোধিতা রয়েছে দেশটিতে। কেননা ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর জার্মানি জ্বালানি সংকটে রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর জার্মানির পক্ষে সস্তায় জ্বালানি পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানি সংকটের আশঙ্কায় চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে যেতে সম্মত হন।

১৯৮৯ সালে স্টুটগার্টের কাছে গড়ে ওঠা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ  হয়ে যাবে জার্মানিতে। এছাড়া বাভারিয়া ও এমল্যান্ডের দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ হয়ে যাবে।

গত বছর জার্মানির উৎপাদিত বিদ্যুতের ছয় শতাংশ এসেছিল এ তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। ১৯৯৭ সালে দেশটির মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুতের হার ছিল ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ।

২০২২ সালে জার্মানিতে উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ ছিল ৪৬ শতাংশ, যা এক দশকের আগের তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ হারে জার্মানি যদি পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তবে তা চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হতে পারে।

এমন সময় জার্মানি এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে যখন অনেক পশ্চিমা দেশ পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে পারমাণবিক বিদ্যুতে ফেরত যাচ্ছে। তবে ইউরোপের বৃহত্তম দেশটি নিজের পরিকল্পনায় অটল।

২০০২ সাল থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের চেষ্টায় ছিল জার্মানি। ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলের শাসনামলে এ প্রক্রিয়া গতি পায়।

এদিকে বন্ধ হওয়া কেন্দ্রগুলোর তেজস্ক্রিয় বর্জ্য কোথায় রাখা হবে তা খুঁজে বের করতে একটি কমিটি গঠন করেছে জার্মান সরকার। জার্মানির হাতে সময় রয়েছে ২০৩১ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যেই এসব ক্ষতিকর বর্জ্য ধ্বংসের জন্য একটি স্থান খুঁজে বের করতে হবে।

জার্মানির অর্থনীতি ও জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, আমাদের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য, চূড়ান্ত একটি ধ্বংসস্থান বের করা যেখানে লাখ লাখ বছর ধরে এ বর্জ্যগুলো নিরাপদে থাকবে। এ রকম ভাণ্ডার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন ভৌগোলিকভাবে খুবই স্থিতিশীল স্থান। সেখানে কোনো ভূমিকম্প হবে না। জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকবে না। ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে, এমন স্থানও নির্বাচন করা যাবে না।

সাধারণত বর্তমানে সচল থাকা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় বর্জ্যগুলো পাশে তৈরি করা সাময়িক স্থাপনাগুলোয়

রাখা হয়।

এদিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও বন্ধ করে দেয়ার পথে রয়েছে জার্মানি। জার্মানি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কয়লা আমদানিকারক দেশ। দেশটি ঘোষণা দিয়েছে ৮৪টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেবে। দেশটির সরকারি কমিশন জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তারা আন্তর্জাতিকভাবে এ অঙ্গীকার করেছে। এ ঘোষণা ইউরোপের বৃহত্তম দেশটির জন্য উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। জার্মানিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪০ শতাংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হয়েছে।

১৯৩৮ সালের মধ্যে জার্মানিতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থাকবে না। কয়লা অঞ্চলের পরিবর্তন করার জন্য ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে।

দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জয়বায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে জার্মানই প্রথম নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তন এটা পৃথিবীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। জার্মানি জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে। একটি বৃহত্তর শিল্পসমৃদ্ধ দেশ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০