অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতা আছে কি না প্রশ্ন ফখরুলের

নিজস্ব প্রতিবেদক: একের পর এক মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতা রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন যখন ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে তোলা হচ্ছে, তখন এসব ঘটনার জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি, সরকারের লোকরাই ‘আগুন লাগিয়ে বেড়াচ্ছে’ এবং তাদের উদ্দেশ্য বিএনপির চলমান আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি ‘ভিন্ন খাতে নেয়া’।

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা (সরকার) ব্যর্থ হয়েছেন, কোনো কিছু মনিটর করেন না। প্রতিদিন সবখানে আগুন লাগছে। এই আগুন লাগার পেছনে আপনারা আছেন। আপনারাই ডাইভার্ট করার জন্য এই যে মানুষের দাবি উঠেছে, ‘সারের দাম কমাও, চালের দাম কমাতে হবে, আমাদের বাঁচতে দিতে হবে, আমাদেরকে একটা ভালো নির্বাচন করতে দিতে হবে, আমাদের ভোটের অধিকার দিতে হবে’Ñএই দাবিগুলো পাশ কাটানোর জন্য, মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে নেয়ার জন্য আপনারা (সরকার) এই আগুন লাগিয়ে বেড়াচ্ছেন।’

গত ৪ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেট ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ১১ এপ্রিল চকবাজারের সিরামিক গুদামে আগুন লাগে।

এরপর গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডে আগুন লেগে পুড়ে যায় ২০টির মতো গুদাম। শনিবার ভোরে আগুন লাগে ঢাকা নিউমার্কেটের পাশে নিউ সুপার মার্কেটে, তাতে পুড়ে যায় ছয় শতাধিক দোকান।

ঈদের আগে এভাবে মার্কেট ও বিপণিবিতানে দফায় দফায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ‘নাশকতার’ সন্দেহের কথা বলেছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মইন উদ্দিন। এ ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই ধরনের সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘পরপর চারটা ঘটনাকে যদি আমরা দেখি, তাহলে এটা কি আদতেই আসলেই কোনো দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে কোনো কারসাজি আছে।’

এসব ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা খুঁজে বেড়াচ্ছেন বিএনপি; কিছু হলে বিএনপিÑউদোর পিণ্ডি বুঁধোর ঘাড়ে। আপনাদের (নিউ সুপার মার্কেটের) ব্যবসায়ীরা নিজেরাই বলে দিলেন প্রথমে যে, তারা নিজের চোখে দেখেছেন, সকালবেলা সাড়ে ৫টার সময়ে সিটি করপোরেশনের পোশাক পরে কয়েকজন লোক এসেছে। মার্কেটের সামনের যে ফুট ব্রিজ ছিল, সেই ফুট ব্রিজে ভেঙে দেয়ার জন্য তারা গ্রিল নিয়ে সেখানে সেই ব্লক কেটে দিয়ে সিঁড়িগুলো ভেঙে দিচ্ছিল। তারা যখন লাগাতে গেছে, ওই গ্রিলের তার পয়েন্টে, সেই পয়েন্টে শটসার্কিট হয়েছে। ব্যবসায়ীরা নিজেরা দেখেছেন।’

তিনি বলেন, ‘তারা আগুন নেভানোরও চেষ্টা করেছে। আগুন নেভাতে যখন পারেনি তখন সিটি করপোরেশনের ওই লোকগুলো পালিয়ে গেল। এটা আমার কথা নয়, এসব সেখানকার ব্যবসায়ীদের কথা। সিটি করপোরেশের দায়িত্বে আছেন এখন কে? সিটি করেপারেশনের দায়িত্বে আছেন আপনারা, আওয়ামী লীগ। তাই দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের এবং এই সরকারের।’

গত শনিবার নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার পর ব্যবসায়ীদের ওই বক্তব্য সংবাদমাধ্যমেও আসে। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পরে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে সেখানকার ফুটব্রিজ ভেঙে ফেলার কোনো সম্পর্ক নেই।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, ঢাকার অধিকাংশ মার্কেটই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে, আর সেজন্যও সরকারকে দায়ী করছেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা পরিবেশের কারণে লাগছে। পরিবেশের বিপর্যয় কে করেছে? এই সরকার যেখানে জায়গা পায়, বিল্ডিং তুলে দেয়, বিল্ডিং তুলে বাজার চালু করে। আবার আওয়ামী লীগের সাঙ্গোপাঙ্গ আছে, তারা চাঁদা আদায় করে অতিরিক্ত দোকান দিয়ে, অবৈধ দোকান দিয়ে বাজারের মানুষের চলাচল অনুপযুক্ত করে দেয়।’

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার পরিবর্তনের চলমান আন্দোলন আরও জোরদার করার হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা এই আন্দোলন শুরু করেছি। ইনশাল্লাহ আমরা এই আন্দোলনের জয়ী হব। এরই মধ্যে আমাদের ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছেন। আরও শুরু হয়েছে অত্যাচার, নির্যাতন, গ্রেপ্তার। কোনো গ্রেপ্তার, হত্যা, নির্যাতন আমাদের আটকে রাখতে পারবে না। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে এই কৃষক ভাইদের এক জায়গায় এনে, সমস্ত শ্রমিক ভাইদের একখানে করে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সেই বিজয় আমরা ছিনিয়ে আনব।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এদেশের মানুষের সহ্যের একটা সীমা আছে। আজকে খুব স্পষ্ট কথা, অবিলম্বে এই সারের দাম কমাতে হবে, আবার আগের জায়গায় আনতে হবে। এই সরকার একটা গণবিরোধী সরকার, এই সরকার সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এই সরকার আজকে আমার সব অর্জনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ খেটে খাই, পরিশ্রম করে খাই, তাদের জীবন দুর্বিষহ করে ফেলেছে। প্রতিবাদ করলে কীÑপ্রতিবাদ করলে গুলি, প্রতিবাদ করলে গ্রেপ্তার, প্রতিবাদ করলে মামলা, তা আবার গায়েবি মামলা, আজ সবখানে সাধারণ মানুষের ওপরে নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন করছে।’

ফখরুলের ভাষায়, এ সরকার ‘জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়নি,’ সে করাণে জনগণের প্রতি তাদের ‘দয়া-মায়া নেই’।

তিনি বলেন, ‘দুটা নির্বাচন করেছে, সেই দুটা কীভাবে করেছে, আপনারা সবাই জানেন। ২০১৪ সালের নির্বাচন, শফিউল আলম প্রধান সাহেব (জাগপার প্রয়াত সভাপতি) বলতেন কুত্তামার্কা নির্বাচন। ২০১৮ সালে মধ্যরাতের অশ্বারোহী সেই মধ্যরাতে সব ঘটনা ঘটিয়ে বলে যে, ‘আমরা জিতে গেছি।’ কিন্তু মানুষ আর সহ্য করবে না। খুব স্পষ্ট করে আমরা বলে দিয়েছি, মূল যে জায়গাটা সেই জায়গাটা হচ্ছে এই সরকারকে সরাতে হবে। এই সরকার যতদিন থাকবে, ততদিন মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বাড়বে, মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চলতেই থাকবে।’

সারের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে এ সমাবেশ হয়। অবিলম্বে সারের মূল্য হ্রাস এবং ধানের দাম বৃদ্ধির দাবি জানান ফখরুল।

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০