ট্রেনে কড়াকড়িতে ভিড় কম সময়মতো ছাড়ছে ট্রেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর যাত্রী আশিকুর রহমানের কাছে এবারের ঈদে ট্রেনযাত্রাটা একেবারে অন্যরকম। গতকাল বুধবার বেলা দেড়টায় বনলতা এক্সপ্রেসে চেপে নিজের শহরের উদ্দেশে যেতে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বললেন, ‘অন্যান্য বছর সারারাত স্টেশনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতাম। কিন্তু ভিড়ের কারণে সিটে বসতেই পারতাম না। কোনো রকমে ঠেলে দরজা দিয়ে উঠলেও এত মানুষ যে, ঠেলে আসার সুযোগ আসলে কম। কিন্তু এবার আসার পথে টিকিট চেক করা হলো কয়েকবার। কোনো ভিড় ছাড়া ট্রেনে উঠলাম, সহজেই এসে সিটে বসলাম। মনে হচ্ছে ঝামেলা ছাড়াই বাড়ি যাওয়া যাবে এবার।’

গত মাস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরুর পাশাপাশি যার নামে টিকিট, তিনি ছাড়া অন্য কারও চড়ায় নিষেধাজ্ঞা এবং টিকিটে সহযাত্রীদের নাম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তখন থেকে ট্রেনযাত্রার চিত্র একেবারে ভিন্ন।

ঈদে কী হবে, তা নিয়ে ছিল প্রশ্ন। প্রতি বছর কমলাপুর থেকে ট্রেনগুলো ছেড়ে যায় উপচেপড়া ভিড় নিয়ে, বিমানবন্দর স্টেশনে অনেক সময় ট্রেনে চড়ার সুযোগই থাকত না। হাজারও যাত্রী উঠে যেত ছাদে। এত যাত্রী নিয়ে ট্রেনগুলো ছুটতে পারত না স্বাভাবিক গতিতে। ফলে সূচি বিপর্যয় ছিল এক সাধারণ চিত্র।

এবার ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট ছাড়া হলেও সংখ্যায় তা সীমিত। ফলে তীব্র গরমে গাদাগাদি করে যেতে হচ্ছে না।

ছাদেও উঠতে দেয়া হচ্ছে না যাত্রীদের। রেলের কর্মীরা জানালেন, কমলাপুর ছাড়াও বিমানবন্দর ও গাজীপুরে ছাদে ওঠা ঠেকাতে রয়েছে নজরদারি।

যাত্রীচাপ কম থাকায় ট্রেনগুলো ছুটতে পারছে স্বাভাবিক গতিতে। ফলে সময় বিপর্যয় দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত।

ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কমলাপুর ছেড়ে গেছে ২৬টি ট্রেন। এর মধ্যে নীলফামারীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ৪০ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। বাকি ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে।

এদিকে যার নামে টিকিট, তিনিই ট্রেন চড়ছেন কি না, সেটি নিশ্চিত করতে তিন জায়গায় চলছে পরিচয় পরীক্ষা।

প্রধান সড়ক থেকে স্টেশনে ঢুকতেই একবার, স্টেশন ভবনের মুখে দ্বিতীয়বার এবং প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার ঠিক আগে আরেকবার টিকিটের সঙ্গে যাত্রীর নাম ও পরিচয় মিলিয়ে দেখছেন রেলওয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা।

নিরাপত্তার এ কড়াকড়িতে যাত্রীদের অসন্তুষ্ট দেখা যায়নি, বরং এ নিয়ম অবাঞ্ছিতদের ঠেকাবে বলে যাত্রীরা ছিলেন খুশি।

চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতীর যাত্রী ইশতিয়াক হাসান বলেন, ‘এবার টিকিট কাটার ঝামেলা যেমন হয়নি, তেমনি ট্রেনে উঠতেও ঝামেলা নেই। কোনো ভিড়ও নেই। খুবই আরামদায়ক ভ্রমণ।’

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেসের যাত্রী সাবরিনা আক্তার বলেন, ‘অন্যবার ট্রেনে উঠতেই যুদ্ধ করতে হতো। টিকিট হাতে পেয়ে সিটে যেতে পারব কি না, তা নিয়ে সংশয়ে থাকতে হতো। এবার এই অবস্থা নেই। রেলওয়ে একটা ধন্যবাদ পেতেই পারে।’

স্টেশনে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয়Ñআগের এমন অভিজ্ঞতা থেকে ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে স্টেশনে চলে এসেছিলেন জাকির হোসেন। কিন্তু স্টেশনে এসে হতবাক তিনি। জাকির বলেন, ‘অন্যান্য বছর অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। ট্রেনে ওঠা যায় না ভিড়ের কারণে। এজন্য আগেই চলে আসতাম। এবার এসে দেখি কোনো ভিড় নেই।’

অন্যান্য বছর দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট কয়টি দেয়া হবে, তা নির্দিষ্ট ছিল না। কিন্তু এবার ট্রেনে আসনসংখ্যা যত, তার চার ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ২৫ শতাংশের বেশি দেয়া হচ্ছে না এ স্ট্যান্ডিং টিকিট।

কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুম ছারওয়ার বলেন, ‘ট্রেনের যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত কোনো ঝামেলা ছাড়াই সব ট্রেন ছেড়ে গেছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০