সুযোগসন্ধানীদের কেনার প্রবণতা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজার সপ্তাহের ব্যবধানে সূচকের উত্থানের মাধ্যমে গত সপ্তাহ পার করছে। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহ সূচক বেড়েছে। সপ্তাহটিতে সূচকের সঙ্গে লেনদেন বেড়েছে ৫২ শতাংশ। গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর অপরিবর্তিত ছিল। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বল্প সময়ে মুনাফার আশায় থাকা সুযোগসন্ধানীদের কেনার প্রবণতায় এ উত্থান হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় চলছে। সেই সঙ্গে হিসাববছর শেষে লভ্যাংশ ঘোষণাও করছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি। ফলে কোন কোম্পানি কেমন ব্যবসা করেছে এবং এর কারণে কোন কোম্পানির শেয়ার থেকে কম সময়ে ভালো মুনাফা হবে, সে আশায় অনেকে বিনিয়োগ করছেন বলে জানান তারা। তাই দীর্ঘ সময়ে বিনিয়োগ নয়, স্বল্প সময়ে মুনাফা তুলতেই এ কেনার চাপ বেড়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থাকা পাট খাতে উত্থান হয়েছে। ফলে আলোচ্য খাতে শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বিপরীতে গত সপ্তাহে ট্যানারি খাতে সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে। ফলে আলোচ্য খাতে শেয়ারদর বেশি কমেছে। দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিমেন্ট খাতের শেয়ার। এ ছাড়া গত সপ্তাহে টেলিকমিউনিকেশন, আর্থিক ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতের শেয়ারদর হ্রাস বা বৃদ্ধির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৯৯৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৪৭৫ কোটি তিন লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে এক হাজার ৫২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ১০৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৪৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪৯১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে গড়ে লেনদেন বেড়েছে ২৫৮ কোটি টাকা বা ৫২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১১৩টির, দর কমেছে ৩৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩৮টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ১৭টি কোম্পানির শেয়ার।

গত সপ্তাহে ডিএসইর সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৫ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ২৭৪ দশমিক ৬ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৫ দশমিক ৭২ পয়েন্ট ও শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ১৩ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে দুই হাজার ২০৮ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে ও এক হাজার ৩৬২ দশমিক ৯০ পয়েন্টে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুযোগসন্ধানী বিনিয়োগকারীদের কেনার প্রবণতা গত সপ্তাহে লক্ষ করা গেছে, যে কারণে ডিএসইর সূচক সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ছিল। বর্তমানে শেষ প্রান্তিক এবং বছর শেষ হওয়া কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার সময় চলছে। ফলে স্বল্প সময়ে মুনাফা তুলতে খাতভিত্তিক কিছু নির্দিষ্ট শেয়ারে তারা কেনার চাপ দেখায়। এ কারণে দুইশর বেশি শেয়ার ও ইউনিটি অপরিবর্তিত থাকলেও কিছু শেয়ারের দর বৃদ্ধির কারণে বাজারে উত্থান হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মৌলভিত্তি কোম্পানির থেকে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা বেশি লক্ষ করা গেছে বলে জানান তারা।

এদিকে গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা পাট খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিমেন্ট খাতে গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল কাগজ ও মুদ্রণ খাতের শেয়ার। এদিকে গত সপ্তাহে শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি কমেছে ট্যানারি খাতে। এ খাতে গত সপ্তাহে শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে লেনদেনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে। খাতটিতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইটি খাতে লেনদেন হয়েছে ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ।  ১২ দশমিক ১০ শতাংশ লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল ভ্রমণ ও অবকাশ খাত।

এদিকে গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে। ঈদের আগের সপ্তাহ শেষে পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ২৮ পয়েন্টে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১০ কোটি ১৭ লাখ টাকা বা ৪৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। তালিকাভুক্ত ২৪৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৯০টির, দর কমেছে ৩১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১২৭টি কোম্পানির।

পাঁচ ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৪৬৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে। সিএসই৫০ সূচক দশমিক ১৪, সিএসই৩০ সূচক দশমিক ৩৩, সিএসইসিএক্স সূচক দশমিক ৫৮ ও সিএসআই সূচক দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে এক হাজার ৩১৫ দশমিক ৯৫, ১৩ হাজার ৪৪৭ দশমিক ৪৯, ১১ হাজার ৬৪ দশমিক ৬০ ও এক হাজার ১৬১ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই এসএমইএক্স সূচক দশমিক ৫২ শতাংশ কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৭০৯ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০