২ বছরে পিডিবির ভর্তুকি লাগবে ৭০ হাজার ৭১২ কোটি টাকা!

বিশেষ প্রতিনিধি: বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৪ শতাংশ পিডিবির (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) নিজস্ব।বাকি ৫৬ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত, আমদানি ও যৌথ বিনিয়োগের কেন্দ্রগুলো থেকে। তবে এ বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। এতে পিডিবির প্রচুর ভর্তুকির প্রয়োজন হয়। চলতি অর্থবছর দুই দফা দাম বৃদ্ধির পরও এ ভর্তুকির চাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বিদ্যুৎ খাত।

পিডিবির সাম্প্রতিক এ বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর শুরুতে বাল্ক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। দুই দফা বৃদ্ধির পর তা দাঁড়িয়েছে ছয় টাকা ৭০ পয়সা। এ মূল্য আর না বাড়ানো হলে চলতি ও আগামী (দুই) অর্থবছরে পিডিবিকে ভর্তুকি দিতে হবে ৭০ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। রেন্টাল, আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার), বাংলাদেশ ও বিদেশি বিনিয়োগের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা কেন্দ্র এবং ভারতের আদানির বিদ্যুৎ কিনতে দুই বছরে এ ভর্তুকি দিতে হবে। তবে বাল্ক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে ভর্তুকি কমবে।

পিডিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর আইপিপি, রেন্টাল, যৌথ বিনিয়োগ ও আদানির বিদ্যুৎ কেনা হবে (সম্ভাব্য) চার হাজার ৩৮৫ কোটি ১০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এজন্য জ্বালানি বাবদ ব্যয় হবে ৪৩ হাজার ৫৬২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর জ্বালানি-বহির্ভূত খাতে (ক্যাপাসিটি চার্জ এবং রক্ষণাবেক্ষণ) ব্যয় হবে ২০ হাজার ৬৯৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মোট উৎপাদন ব্যয় পড়বে ৬৪ হাজার ২৫৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়বে ১৪ টাকা ৬৫ পয়সা।

এদিকে চলতি অর্থবছর বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির পূর্বে ও দুই দফা বৃদ্ধির পরের গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে পাঁচ টাকা ৯৮ পয়সা। এতে বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবি আয় করবে মাত্র ২৬ হাজার ২২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ পিডিবির লোকসান দাঁড়াবে ৩৮ হাজার ৩১ কোট ১০ লাখ টাকা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবিকে লোকসান গুনতে হবে আট টাকা ৬৭ পয়সা। আর এ ঘাটতি পূরণে চলতি অর্থবছর ৩৮ হাজার ৩১ কোট ১০ লাখ টাকা ভর্তুকি হিসেবে দিতে হবে।

অপরদিকে আগামী অর্থবছর আইপিপি, রেন্টাল, যৌথ বিনিয়োগ ও আদানির বিদ্যুৎ কেনা হবে (সম্ভাব্য) পাঁচ হাজার ৬২ কোটি ১০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এজন্য জ্বালানি বাবদ ব্যয় পড়বে ৩৫ হাজার ৪৭৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর জ্বালানি-বহির্ভূত খাতে ব্যয় দাঁড়াবে ৩১ হাজার ১৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মোট উৎপাদন ব্যয় পড়বে ৬৬ হাজার ৫৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়বে ১৩ টাকা ১৬ পয়সা।

আগামী অর্থবছর বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার আর না বাড়ালে গড় মূল্য ছয় টাকা ৭০ পয়সায় অপরিবর্তিত থাকবে। এতে বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবি আয় করবে মাত্র ৩৩ হাজার ৯১৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ পিডিবির লোকসান দাঁড়াবে ৩২ হাজার ৬৮১ কোট ২০ লাখ টাকা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিকে পিডিবির লোকসান গুনতে হবে ছয় টাকা ৪৬ পয়সা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ডিসেম্বরে বাল্ক মূল্যহার বাড়ানো হয়েছে। পরে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে আরেক দফা বাড়ানো হয় বাল্ক মূল্যহার। দুই দফায় যথাক্রমে মূল্যহার বাড়ানো হয় ২১ শতাংশ ও ৮ শতাংশ। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লা ও ফার্নেস অয়েলের দাম কমায় জ্বালানি খাতে খরচ অনেকটাই কমেছে। আগামী অর্থবছর এ ব্যয় আরও কমার সম্ভাবনা আছে। এজন্য জ্বালানি ব্যয় কমানো হয়েছে।

যদিও নতুন বেশকিছু বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে ও আসছে। এগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ হবে অনেক বেশি। এছাড়া ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় পিডিবির ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। ফলে আগামী অর্থবছর জ্বালানি-বহির্ভূত খাতে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তবে জ্বালানি ব্যয় কমে আসায় সার্বিকভাবে উৎপাদন ব্যয় কমবে। পাশাপাশি আয় কিছুটা বাড়ায় ভর্তুকি চাহিদা কমবে।

প্রসঙ্গত, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে বড় অঙ্কের লোকসান শুরু করে পিডিবি। সে অর্থবছর সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় চার হাজার কোটি টাকা। পরের অর্থবছর (২০১১-১২) তা বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৩৫৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকায়। ২০১২-১৩ অর্থবছর পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয় চার হাজার ৪৮৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছর ছয় হাজার ১০০ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থছর আট হাজার ৯৭৮ কোটি ৯ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছর চার হাজার ৩৬৫ কোটি ২৪ লাখ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছর তিন হাজার ৯৯৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর পর্যন্ত ভর্তুকির অর্থ ঋণ হিসেবে দেয়া হতো।

২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে অনুদান হিসেবে পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া শুরু হয়। ওই অর্থবছর ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল পাঁচ হাজার ৪৮৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। পরের (২০১৮-১৯) অর্থবছর ভর্তুকি দেয়া হয় সাত হাজার ৫০০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাত হাজার ৪৩৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছর দেয়া হয় ২৯ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০