শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে চলতি বছর প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গসংস্থা ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের (ফাও) সূচক বলছে, গত মাসে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম গড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ। খবর: রয়টার্স।
বিশ্বজুড়ে অধিকাংশ খাদ্যপণ্যের বাণিজ্য পর্যবেক্ষণ করে ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের সূচক ফাও প্রাইস ইনডেক্স। এ সূচকের বরাত দিয়ে গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, গত মার্চে সূচকের অবস্থান ছিল ১২৬ দশমিক ৫ পয়েন্টে। তারপর এপ্রিলে সূচকের অবস্থান ছিল ১২৭ দশমিক ২ ও তার আশপাশে। শতকরা হিসেবে সূচকের উল্লম্ফন হার ২০ শতাংশ।
ফাও’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত মাসে সিরিয়াল, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার এবং ভোজ্যতেলের দাম প্রায় স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে চিনি, মাংস ও চালের দাম। ফাও প্রাইস ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ থেকে এপ্রিলে বিশ্বজুড়ে চিনির দাম বেড়েছে গড়ে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। মাত্র এক মাসের মধ্যে চিনির দামের এ পরিমাণ উল্লম্ফন ২০১১ সালের পর আর দেখা যায়নি।
চালের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। গত এক মাসে বিশ্ববাজারে চালের দাম শতকরা কত বেড়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি। তবে সামনের দিনগুলোয় এ দাম আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ আবহাওয়াগত কারণে বিশ্বের দুই বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী দেশ চীন ও ভারতে চলতি মৌসুমে চালের উৎপাদন বেশ খানিকটা কমেছে।
অন্যদিকে মার্চ থেকে এপিল এক মাসে মাংসের দাম বিশ্বে বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
ফাও’র মূল শাখার শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো তোরেরো বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারটি উদ্বেগজনক। কারণ বিশ্বের যেসব অঞ্চলে ভাত প্রধান খাদ্য, চালের দাম বৃদ্ধি পেলে সেখানে বিকল্প হিসেবে আটা-ময়দার ব্যবহার বাড়বে। ফলে চালের বাজার অস্থির হলে গম-ভুট্টার বাজারেও তার প্রভাব পড়বে।
চলতি বছরের মার্চে তিন দশকের মধ্যে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। গত বছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। ভোজ্যতেল, চিনি, গমসহ সব খাদ্যপণ্যেরই দাম বাড়ে। মার্চে এ মূল্যসূচক ১৫৯-এর ঘরে পৌঁছায়, যা ১৯৯০ সালের পর সর্বোচ্চ। শুধু তা-ই নয়, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি।
মহামারি করোনার প্রভাব শেষ হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মুখোমুখি হয় বিশ্ব। পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার জেরে প্রথম আঘাত আসে জ্বালানি খাতে। এরপর বন্ধ হয় খাদ্যশস্য রপ্তানি।
পৃথিবীর রুটির ভাণ্ডার খ্যাত এই দুই দেশ বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যশস্যের জোগানদাতা। সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় লাফিয়ে বাড়তে থাকে পণ্যের দাম। মূল্যস্ফীতির মুখে পড়ে বেশিরভাগ দেশ।
ফাও জানায়, উন্নত দেশগুলো ভর্তুকিসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ায় খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ধাক্কা সামলাতে পেরেছে ওইসব দেশের মানুষ। তবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নি¤œ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোকে।
গত মাসে ম্যাক্সিমো টোরেরো বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যখন দাম কমছে, ঠিক তখনই স্থানীয় বাজারগুলোয় বাড়ছে। এসব বাজারে বর্তমানে দাম অনেক উঁচুতে অবস্থান করছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে নিট খাদ্য আমদানিকারক দেশগুলোয় ঝুঁকি প্রকট হচ্ছে।
ফাও’র গত মাসের মূল্যসূচক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্চে সূচক দাঁড়িয়েছে ১২৬ দশমিক ৯ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সূচক ২০ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। এ সময় দানাদার খাদ্যশস্য ও ভোজ্যতেলের দামে বড় দরপতন খাদ্যপণ্যের গড় দাম কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে। দানাদার খাদ্যশস্যের দাম ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে গমের দাম কমেছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ায় শক্তিশালী উৎপাদন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফলন পরিস্থিতির উন্নতি, রাশিয়া থেকে সরবরাহ বৃদ্ধি ও কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর থেকে ইউক্রেনের চলমান রপ্তানি গমের দাম নি¤œমুখী রাখতে সহায়তা করেছে। এদিকে বিশ্বজুড়ে ভুট্টার দাম ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। ব্রাজিলে রেকর্ড উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় এমনটি ঘটেছে। ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডসহ শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোয় চাল উৎপাদন বাড়ায় শস্যটির দাম কমেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।