সরকার নয়, সুষ্ঠু নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে যে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, তা নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের ওপরÑএমনটাই মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে চলে যায়। এখানে দেখতে হবে, নির্বাচনের যে বিধিবিধান রয়েছে, যে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে নির্বাচন হওয়া দরকার, যে আইন-কানুন আছে সেটা নির্বাচন কমিশন পালনে অবহেলা করছে কিনা। একই সঙ্গে বিএনপি অংশ নিলে এবারের সিটি নির্বাচনটি তাদের জন্য একটা নিরীক্ষা হতে পারত বলে মনে করেন তারা।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত ‘কেমন হবে সিটি নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন।

গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রেজোয়ানুল হক।

সরকার চাইলে ভালো নির্বাচন হয়, না চাইলে হয় নাÑমন্তব্য করে বৈঠকে সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাইদ খান বলেন, ‘ভালো নির্বাচন বলতে যা বোঝায় অংশগ্রহণমূলক এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। এটা সম্ভব নয়, কেননা ভেতরে অনেক সমস্যা রয়েছে। এই কারণে জনগণের মনে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে যে ভোট দিয়ে কী হবে, যা হবার হবে।’

সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, ‘সরকারি দল জাতীয় নির্বাচনের আগে একটা উইন্ডো ডিসপ্লে। সুতরাং বড় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনে যেমন সরকারি দলের অবস্থান আছে, তেমনই বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিরও একটা অবস্থান থাকার কথা। তারা নির্বাচন বর্জন করে কিন্তু কিছু অর্জন করছে না। আমার মনে হয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও এই বিরোধিতা করা যেত।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল গড়ে উঠতে পারেনি। তাই সরকারি দল বা বিরোধীদল উভয় থেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী আছে। এই রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘বিরোধীদল যদি জয়লাভ করে তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, বিরোধীদল জয়লাভ না করলে সুষ্ঠু হয় নাই, এই ধরনের একটা মানসিকতা আমাদের মাঝে তৈরি হয়েছে। এই মাইন্ড সেট থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। কেননা সরকার ক্ষমতা থাকা অবস্থায় যে কোনো পার্টি জয়যুক্ত হতে পারে, যদি তার সমর্থন থাকে, প্রার্থী যদি ভালো হয়।’

তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিএনপি একটি রাজনৈতিক পার্টি। সে যদি স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন করবে না, তাহলে সেটার দায় কি সরকার নেবে? এই দায় দায়িত্ব তার নিজস্ব। তাই কেউ অংশগ্রহণ না করলে সরকার দায় নেবে কেন? আমার দেখতে হবে নির্বাচনের যে বিধিবিধান আছে, যে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে নির্বাচন হওয়া দরকার, যে আইনকানুন আছে সেটা এখানে পালন হচ্ছে কি না। সেগুলো যদি হয় তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবার কোনো কারণ দেখি না আমি।’

প্রশাসন নির্বাচনে কোনো ভূমিকা পালন করে না, জানিয়ে সাবেক সচিব জিল্লার রহমান বলেন, ‘প্রশাসনে যারা চাকরি করেন তারা চাকরিজীবী। সিদ্ধান্তটা নেয় নির্বাচন কমিশন ও যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই সরকার। যখন নির্বাচন চলে তখন এই নির্বাচনের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তারা সবাই নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে চলে যায়। আমার বক্তব্য এখানে সরকারের তেমন কোনো কর্মকাণ্ড থাকে না।’

মানবাধিকার ও উন্নয়নকর্মী খুশী কবিরের মতে, শুধু সিটি নির্বাচন নয়, সব নির্বাচনই মানুষ যেভাবে দেখতে চায় সেভাবে হবে কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন। এখানে নির্বাচন চলাকালীন অল্প সময়ের জন্য প্রশাসনসহ

অন্যান্য যারা আছে সবাই নির্বাচন কমিশনের অধীনে যায়। কিন্তু তাদের প্রমোশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ভর করে সরকারের ওপর। এক্ষেত্রে নির্বাচনে কতটা নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করবে এটাও ভেবে দেখা দরকার।

রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করলেও নির্বাচিত হলে জনপ্রতিনিধিরা কীভাবে জনগণের উন্নয়নে কাজ করবেÑএমন আলোচনা হয় না মন্তব্য করে নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘নির্বাচনের প্রতি জনগণের আগ্রহ ও সম্পৃক্ততা কমছে। এটা রাজনৈতিক দলগুলো টের পেয়েছে। আসেন ওই আলোচনাটা করি কীভাবে জনসম্পৃক্ততার ভিত্তিতে জননির্বাচনকে ফেরত আনব। এটা ছাড়া মুক্তি নাই। আপনি যতই উন্নয়নের জয়গান গান, আপনি সকলকে নিয়ে রেল গাড়িতে উঠতে পারবেন না। আর সকলকে নিয়ে যদি যাওয়া না যায় তাহলে এই উন্নয়ন টেকসই হবে না।’

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০