‘আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী জুনের মধ্যে রিজার্ভ গণনা বড় চ্যালেঞ্জ’

নিজস্ব প্রতিবেদক: রিজার্ভ বা বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের প্রকৃত হিসাবায়ন আগামী জুনের মধ্যে শুরু করতে শর্ত দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে জুনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা বড় চ্যালেঞ্জ দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল রোববার আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

মুখপাত্র জানান, রিজার্ভ গণনা ও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একটা ইস্যু আছে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, আগামী জুনের মধ্যে রিজার্ভ হিসাবায়ন দেখানো বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে আগামী মুদ্রানীতিতে ঘোষণা দেয়া হবে।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী মুদ্রানীতিতে ইন্টারেস্ট রেট করিডর বা বাজারভিত্তিক সুদহার চালু ও মুদ্রার একক বিনিময় হার চালুর দিকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাচ্ছে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, মুদ্রার একক বিনিময় হার মানে এই নয় যে ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের হার একই হবে। এখন একাধিক বিনিময় হার আছে, তবে সেগুলোর মধ্যকার ব্যবধান ২ শতাংশের মধ্যে এলেই বলা যাবে, মুদ্রার একক বিনিময় হার আছে। সেটা প্রায় অর্জিত হয়ে গেছে। তবে তা আরও বেশি সীমার মধ্যে আনার চেষ্টা করা হবে।

আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে আসবে। বাংলাদেশকে দেয়া ঋণের শর্ত অনুযায়ী যেসব সংস্কার কার্যক্রম চালানোর কথা, সেগুলোর কিছু বিষয় সেপ্টেম্বরের মধ্যে অর্জিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ নিয়ে মুখপাত্র বলেন, আইএমএফ ঘোষিত ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির বিষয়ে এবার আলোচনা হয়নি। আইএমএফ প্রতিনিধিদল তাদের শিডিউল সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্কারের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া পদক্ষেপে সন্তুষ্ট।

তিনি আরও বলেন, সংস্থাটি আমাদের নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে দ্বিমত করেনি। তবে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়টা আরও পরে। আইএমএফ মিশন দল আগামী অক্টোবরে আবার বাংলাদেশ সফরে আসবে,

তখন এ বিষয়ে জানা যেতে পারে। কারণ সেটিই হবে মূল মিটিং।

মেজবাউল হক বলেন, চলমান সফরে প্রধানমন্ত্রী যেসব দেশে গেছেন, তারা সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সেগুলো আসতে শুরু করলে দেশের ‘ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট’ আরও শক্তিশালী হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, এখনও তিনটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথমটি কভিড, দ্বিতীয়টি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং তৃতীয়টি বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি। এ সমস্যার সমাধান কবে হবে সেটা কেউই বলতে পারবে না। সংকট মোকাবিলায় সময়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এছাড়া আগামীতে বেশ কয়েকটি বিষয় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানিসহ পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে, তাই দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এছাড়া আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ আসছে সামনে। এটা হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সবসময় দেখা যায়, নির্বাচনী বছরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যায়। সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এখন আগামীতে আমাদের পরিস্থিতি কী হবে তা সময় বলে দেবে।

আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে, তার শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একটি সুদহার করিডর ব্যবস্থা নেবে। সুদহার করিডর এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সুদহারের বেঁধে দেয়া সীমা ধীরে ধীরে তুলে নেয়া ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহারে পরিচালনভিত্তিক পরিবর্তন করা যায়।

রপ্তানি তথ্যের সংজ্ঞার গরমিলের কারণে রপ্তানি আয় দেশে না আসার পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, সময়মতো দেশে না আসা অর্থের পরিমাণ ১৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার আটকে রয়েছে ক্রয়াদেশের তুলনায় কম পণ্য সরবরাহ করার কারণে বিল পরিশোধ না করায়। ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার আটকে রয়েছে রপ্তানিকারক দেউলিয়া হয়ে পড়ায় ও ২ কোটি ডলার আটকে রয়েছে আমদানিকারক দেউলিয়া হওয়ার কারণে। ভুয়া রপ্তানির কারণে আটকে রয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ও মামলার কারণে ২৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।

মেজবাউল হক বলেন, যখন অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য দেশে বিক্রি হচ্ছে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তাদের হিসাবে তা রপ্তানি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এ জন্য দেশে কোনো রপ্তানি আয় আসছে না। এ পণ্য যদি আবার রপ্তানি হয়, তাহলেই কেবল রপ্তানি আয় দেশে আসার কথা। এখানেই ১০০ থেকে ২০০ কোটি ডলারের পার্থক্য তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে ৩০০ কোটি ডলার কেন দেশে আসছে না, তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এ নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সরোয়ার হোসেন বলেন, পণ্য রপ্তানি হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে দেশে অর্থ আসার কথা। এরপর না এলে তা অপ্রত্যাবাসিত ধরা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০