আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল। ১৮২০ সালের ১২ মে তিনি ব্রিটেনের ভিল্টা কলম্বিয়ায় অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার আগ্রহ ও চেষ্টায় তিনি বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস ও দর্শন বিষয়ে জ্ঞানলাভ করেন। ছোটবেলা থেকেই ফ্লোরেন্সের মধ্যে আর্তমানুষের প্রতি সেবার মনোভাব লক্ষ করা যায়। কিন্তু তখনকার সময়ে নার্সিং পেশাকে সম্মানের চোখে দেখা হতো না। এছাড়া তার পিতা-মাতা চাননি ফ্লোরেন্স নার্স হোক। তাই ফ্লোরেন্স বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হন। ১৭ বছর বয়সে তিনি ডার্বিশায়ার থেকে লন্ডনে চলে আসেন। ১৮৫১ সালে তিনি জার্মানিতে নার্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে যান। ফিরে এসে ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত লন্ডনের ‘কেয়ার অব সিক জেন্টলওমেন ইনস্টিটিউটের’ তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করেন। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ব্রিটেনে যুদ্ধাহতদের করুণ অবস্থার সংবাদ পেয়ে ১৮৫৪ সালের ২১ অক্টোবর তিনি ৩৮ সেবিকা নিয়ে ক্রিমিয়ায় যান। সেখানে ব্রিটেন, রাশিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে দুই বছর ধরে চলা ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহতদের ক্লান্তিহীন সেবা করে সুস্থ করে তোলেন। তার এই মহতী কাজের জন্য তিনি ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ সম্মান লাভ করেন। ১৮৫৫ সালে নার্স প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। তিনি নাইটিংগেল ফান্ড গঠন করে এর জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল ১৮৫৯ সালে ‘নোটস অন নার্সিং’ গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থটি নার্সিং স্কুলে পাঠ্যসূচির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ১৮৫৯ সালে তিনি ‘রয়্যাল স্ট্যাটিসটিক্যাল সোসাইটি’র সদস্য নির্বাচিত হন। লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশারূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাইটিংগেল ট্রেনিং স্কুল’; যার বর্তমান নাম ‘ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল স্কুল অব নার্সিং। অসংখ্য পদক আর উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল। ১৮৮৩ সালে রানি ভিক্টোরিয়া তাকে ‘রয়েল রেড ক্রস’ পদক প্রদান করেন। প্রথম নারী সেবিকা হিসেবে তিনি ‘অর্ডার অব মেরিট’ খেতাব লাভ করেন ১৯০৭ সালে। ১৯০৮ সালে লাভ করেন লন্ডন নগরীর ‘অনারারি ফ্রিডম’ উপাধি। ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট লন্ডনে নিজ বাসভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার জীবনী নিয়ে ১৯১২, ১৯১৫, ১৯৩৬ ও ১৯৫১ সালে চারটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯৭৪ সালের ১২ মে থেকে তার জš§দিনটি পালন করা হয় ‘আন্তর্জাতিক সেবিকা দিবস’ হিসেবে।
কাজী সালমা সুলতানা