হামিদুর রহমান : গরমের উত্তাপ শরীরেও যেমন, বাজারেও তেমন। আমরা বড়রা সহ্য করতে পারলেও ছোট শিশু আর বয়স্কদের জন্য খুব কষ্টের। বাসায় তিন বছরের ছোট মেয়ে। দিনের মধ্যে তিন-চারবার বিদ্যুৎ যাওয়া করে করে। বাধ্য হয়ে ফ্যান কিনতে এসেছি। ফ্যানের দাম অনেক বেশি। তবুও নিতে হচ্ছে। এভাবেই শেয়ার বিজের সঙ্গে গরমের অভিজ্ঞতা জানালেন ইস্কাটনের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মেহেদী মোরশেদ।
তার সঙ্গে কথা বলার সময় যোগ হন আরেক ক্রেতা বাসাবোর মিজানুর রহমান। পেশায় ব্যাংকার। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ বছর প্রথম থেকেই বিদ্যুতের সমস্যা শুরু হয়েছে, বাসায় বাচ্চাদের পাশাপাশি বৃদ্ধদের ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে। ঘরে বাচ্চারা অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এসি রেখেও লাভ নেই। বিদ্যুৎ না থাকলেও সব কিছুই অচল। তাই গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি।’
গরমের পাশাপাশি লোডশেডিং বাড়ায় প্রভাব পড়েছে রিচার্জেবল ফ্যানের (চার্জিং ফ্যান)। প্রতিটি ব্র্যান্ডের ফ্যানের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে দাম বাড়লেও বিক্রিও বেড়েছে। তবে লোডশেডিং ও গরমের পাশাপাশি এলসি স্বাভাবিক না হওয়াও দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর নবাবগঞ্জ বাজারে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কোম্পানির ফ্যানে মডেল অনুযায়ী দাম বেড়েছে দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। মূলত গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
বাজারের রিচার্জেবল ফ্যানের মধ্যে রয়েছেÑডিফেন্ডার, ক্লিক, ভিশন, ক্যানেড আরও কয়েকটি ব্র্যান্ড। ডিফেন্ডারের ১৪ ইঞ্চির রিচার্জেবল একটি ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৫ হাজার টাকা, যেটি আগে অর্থাৎ ডলার ও লোডশেডিংয়ের আগে যখন বাজার স্বাভাবিক ছিল সেই সময় বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে। ১৬ ইঞ্চির একটি ডিফেন্ডার রিচার্জেবল ফ্যান বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৪০০ টাকায়। যেটি আগে বিক্রি হতো ৩ হাজার ৬০০ টাকা দরে। আর ফুলস্ট্যান্ড একটি ডিফেন্ডার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকায়। যেটি আগে বিক্রি হতো প্রায় ৫ হাজার টাকায়।
এদিকে ক্লিক ব্র্যান্ডের ১৪ ইঞ্চি একটি রিচার্জেবল ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়। যেটি আগে বিক্রি হতো প্রায় ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। আর ১২ ইঞ্চি একটি রিচার্জেবল ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়; যা আগে বিক্রি হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ টাকায়।
নবাবপুর রোডের পাইকারি মার্কেটের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম (রব্বি) শেয়ার বিজকে বলেন, ‘লোডশেডিং আর গরম বাড়ায় চার্জার ফ্যানের চাহিদা অনেক বেড়েছে। তবে ডলারের মূল্য বাড়ায় আমরা চাইলেও কম দামে পণ্য দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। তবে সামনে দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে।’
নবাবপুর রোডের মুন ইলেকট্রিক হাউসের বাবুল আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘লোডশেডিং, গরম আর চাহিদা সবগুলো যখন একসঙ্গে বাড়ে, তখন বাজার একটি বাড়বে এটা স্বাভাবিক। অনেক ব্যবসায়ী এখনও এলসি খুলতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে গরম আর লোডশেডিং যদি না কমে দাও আরও কিছুটা বাড়তে পারে।
তবে অনেক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, ‘নবাবপুরে ফ্যানের দাম বাড়তি হলেও পাড়া-মহল্লায় দাম আরও বেশি। মডেল অনুযায়ী দেড় থেকে তিন হাজার টাকা সাশ্রয় হয়।’
রাজধানীর শান্তিনগর থেকে ফ্যান কিনতে এসেছেন আবদুল জলিল। তিনি জানান, ‘মহল্লায় কয়েকটি বাজার ঘুরে এসেছেন নবাবপুর বাজারে। মহল্লায় যে ফ্যান ৬ হাজার ৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছে, একই ফ্যান নবাবপুর বাজার থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকায় নিয়েছেন।’