২০২২ সালে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ১০ গুণ বাড়িয়েছে ভারত

শেয়ার বিজ ডেস্ক:রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির পরিমাণ ২০২২ সালে ১০ গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ঋণদাতা ব্যাংক অব বরোদা। খবর: বিবিসি।

ব্যাংকটির হিসাব বলছে, মস্কো থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বাড়িয়ে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত প্রায় ৫০০ কোটি ডলার সাশ্রয় করেছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। ভারত সে পথে হাঁটেনি, উল্টো সস্তায় পাওয়া রুশ তেল কেনা বাড়িয়েছে।

পশ্চিমাদের নেয়া পদক্ষেপের পর মস্কোও কম দামে তাদের জ্বালানি চীন ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক ভারতের কাছে বিক্রি করে যাচ্ছে।

২০২১ সালে ভারত বছরে যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছিল, তার মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ ছিল রাশিয়ার তেল। এখন এ হার প্রায় ২০ শতাংশে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে ব্যাংক অব বরোদা। তাদের হিসাব মতে, গত অর্থবছরে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে প্রতি টন অপরিশোধিত তেলে ৮৯ ডলারের মতো সাশ্রয় করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর তুমুল চাপ সত্ত্বেও ভারত রাশিয়া থেকে আমদানির ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় তাল মেলায়নি। ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা পাঠানোর ঘটনায় জোর গলায় নিন্দাও জানায়নি তারা।

নয়াদিল্লি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি হাজির করে বলছে, তারা এখনও আমদানি করা জ্বালানির ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল, পাশাপাশি এখনও দেশের বিপুলসংখ্যক লোক দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে, যে কারণে তারা বেশি দামে তেল কেনার মতো অবস্থায় নেই।

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে যত তেল কিনেছে, ইউরোপ তার তুলনায় ছয়গুণ বেশি কিনেছে বলে গত বছর এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছিলেন, ইউরোপ এমনভাবে তার আমদানি কমিয়েছে, যেন তা তার জন্য স্বস্তিদায়ক হয়। এটা যদি রাশিয়া থেকে আমদানিনীতির বিষয় হয়, তাহলে ইউরোপ কেন যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই তেল আমদানি বন্ধ করে দেয়নি?

ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা না যাওয়ায় রাশিয়াও এশিয়ার বড় জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলোর কাছে সস্তায় তেল বিক্রি অব্যাহত রাখবে বলে ধারণা অনেক বিশেষজ্ঞের।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনাকারী প্রতিষ্ঠান বন্দে ইনসাইটসের বন্দনা হরি বলেন, আমাদের ধারণা, চীন ও ভারতে সস্তায় তেল বিক্রি অব্যাহত রাখবে রাশিয়া। যতদিন সম্ভব ভারতের তেল পরিশোধনকারীরা তাদের লাভ সর্বাধিক করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে তারা আগের মতো অপরিশোধিত তেল কেনায় ফেরত যাবে।

ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানও সস্তায় রাশিয়ার তেল কিনতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জ্বালানিবিষয়কমন্ত্রী মুসাদিক মালিক। তিনি বলেন, রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ইসলামাবাদকে প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো একই ছাড় দেয়া হবে। তবে মালিক দুই দেশের মধ্যে চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তুলনামূলক কম দামে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কিনতে ইসলামাবাদ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বলে জানান তিনি।

এদিকে রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতায় পরিণত হয়েছে চীন। এর মধ্য দিয়ে চীনের কাছে তেল বিক্রিতে সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে গেল রাশিয়া। দেশটি চলতি বছরের প্রথম দুই মাসÑজানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে চীনে ১৫ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন টন তেল রপ্তানি করেছে। অর্থাৎ দিনে রাশিয়া ১৯ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল তেল চীনে বিক্রি করছে।

চীন সরকারের তথ্য বলছে, গত বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির তুলনায় এ বছরের প্রথম ২ মাসে চীনে রাশিয়ার তেল রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ২৩ দশমিক ৮ ভাগ। ২০২২ সালের একই সময় রাশিয়া থেকে চীনে প্রতিদিন তেল রপ্তানি করা হতো ১৫ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০