সব রেকর্ড ভেঙে আর্জেন্টিনার মূল্যস্ফীতি ১০৯ শতাংশ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আর্জেন্টিনায় বার্ষিক ভিত্তিতে অর্থাৎ গত বছরের সাপেক্ষে চলতি বছরের এপ্রিলে ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় মূল্যস্ফীতি ১০৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আর্জেন্টিনার ইতিহাসে তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্চেও তা ১০০ শতাংশের ওপরে ছিল। খবর: রয়টার্স।

আর্জেন্টিনার পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটের সূত্রে গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

বর্তমানে বিশ্বের যেসব স্থানে মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি, আর্জেন্টিনা তার মধ্যে অন্যতম। এ হারের কারণে দেশটির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে দেশটির মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ২০২২ সালে দেশটির বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ১৯৯১ সালের পর যা ছিল সর্বোচ্চ। সেবার দেশটির মূল্যস্ফীতি ১৭১ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

আর্জেন্টিনা সরকার ২০২৩ সালের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৬০ শতাংশ। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বাজারের বাস্তবতার আলোকে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি ১২৬ দশমিক ৪ শতাংশে উঠতে পারে।

ডলারের বিপরীতে আর্জেন্টিনার মুদ্রার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। সামনে দেশটির জাতীয় নির্বাচন, তার আগে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার দরপতনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদ্যমান এ আর্থিক পরিস্থিতি চলতি বছরের শেষের দিকে নির্ধারিত নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে দেবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ১০০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি সহ্য করা অসম্ভব। নাগরিকরা বলছেন, এভাবে আর চলতে পারে না। গতকাল আর্জেন্টিনার দাপ্তরিক হিসাবে ডলারের বিপরীতে পেসোর মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৩৮ দশমিক ৫-এ, কিন্তু কালোবাজারে তা ৪৭৪ পেসো।

আর্জেন্টিনার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হলো কৃষি ও পশুসম্পদ। কিন্তু মারাত্মক খরার কারণে গত বছর দেশটির রপ্তানি কমেছে। আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতি এত বেশি যে, পণ্যের দাম প্রায় প্রতি সপ্তাহে পরিবর্তিত হয়। বেশিরভাগ মানুষ যা বেতন পান বা উপার্জন করেন প্রায়ই তার তুলনায় দ্রব্যমূল্য অনেক বেশি হয়ে গেছে।

দেশটির সরকার পণ্যদ্রব্যের ক্রমবর্ধমান এ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলেও তা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্য বেঁধে দেয়া এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ বাড়াতে শস্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ফলে জনগণের উপার্জন করার সক্ষমতা ও অর্থ সঞ্চয় কমে গেছে এবং একই সঙ্গে আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

গত ফেব্রুয়ারিতে আর্জেন্টিনার বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ১০০ শতাংশ ছাড়ায়। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। ফেব্রুয়ারিতে এর আগের ১২ মাসের মধ্যে দেশটির মূল্যস্ফীতি ১০২ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়, গ্রাহক মূল্যসূচকে (সিপিআই) মাসিক উচ্চ-প্রত্যাশিত ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হারের চেয়ে যা বেশি।

এ পরিস্থিতিতে ২০২২ সালে ইস্তফা দেন আর্জেন্টিনার অর্থমন্ত্রী মার্টিন গুজম্যান। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আর্জেন্টিনা ছিল রীতিমতো ধনী। কিন্তু পরে ক্রমেই অবস্থা বদলেছে। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য কিংবা শিল্পবৈচিত্র্যের মতো ফ্যাক্টর থাকা সত্ত্বেও আর্জেন্টিনা এখন মধ্য আয়ের দেশ। সেই পরিস্থিতিও ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। লাফিয়ে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি। এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ যে পরিস্থিতি আরও সংকটজনক করে তুলেছে তা গত বছরই জানিয়েছিল দেশটির কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের শেষ দিকে মার্টিন গুজম্যান মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি কির্চনারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল তার। কীভাবে দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০