বিশেষ প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ১২ মে দিবাগত রাতে (১২টার পর) মহেশখালীর ভাসমান দুটি টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এতে পাইপলাইনে গ্যাসের সরবরাহ কমে, যার প্রভাব পড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। তবে মোখা আঘাত হানার পর দুদিন অতিক্রান্ত হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহও বেড়েছে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সে গ্যাস দেয়া হচ্ছে না। উল্টো বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিমভাবে লোডশেডিং তৈরি করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোখার কারণে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ কমে যায় ১৬৪ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট)। এতে ১৩ মে সর্বোচ্চ লোডশেডিংয়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়। তবে ১৫ মে গ্যাস সরবরাহ বাড়লেও বিদ্যুৎ খাতের পরিবর্তে তা শিল্প, আবাসিকসহ অন্যান্য খাতে বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখনও লোডশেডিং কমেনি। বরং রেকর্ডের কাছাকাছি লোডশেডিং হয়েছে।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তথ্যমতে, ১৩ মে দেশে গ্যাস সরবরাহ কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৫৭ দশমিক ৯ এমএমসিএফ। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা হয় ৮৮৩ দশমিক ৬ এমএমসিএফ। ১৪ মে গ্যাস সরবরাহ সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৬৭ দশমিক ৫ এমএমসিএফ। তবে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ উল্টো কমে দাঁড়ায় ৭৯১ দশমিক ১ এমএমসিএফ। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে ৯২ দশমিক ৫ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়।
যদিও ১৫ মে গ্যাস সরবরাহ আরও বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৪১ দশমিক ২ এমএমসিএফ। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস দেয়া মাত্র ৭৯৬ দশমিক ৫ এমএমসিএফ। অর্থাৎ গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে ২৭৩ দশমিক ৭ এমএমসিএফ। তবে বিদ্যুৎ খাতে বাড়তি গ্যাস দেয়া হয়েছে মাত্র পাঁচ দশমিক ৪ এমএমসিএফ। গ্যাস সরবরাহ না বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, ১৩ মে রাত ৯টায় (পিক আওয়ার) সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৩৪৯ মেগাওয়াট। আর ওইদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় রাত ১২টায় দুই হাজার ৯২৫ মেগাওয়াট। পরের দিন (১৪ মে)
সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় রাত ৯টায় ১১ হাজার ২৫ মেগাওয়াট। ওইদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় রাত ১টায় দুই হাজার ৮৫৬ মেগাওয়াট। আর ১৫ মে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় রাত ৯টায় ১১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। ওইদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় বিকেল ৪টায় দুই হাজার ৮৩৭ মেগাওয়াট।
এদিকে ১৩ মে সর্বনি¤œ উৎপাদন করা হয় সকাল ৯টায় ৯ হাজার ৭৬৬ মেগাওয়াট। ১৪ মে সর্বনি¤œ উৎপাদন ছিল সন্ধ্যা ৬টায় ৯ হাজার ৬ মেগাওয়াট। আর ১৫ মে সর্বনি¤œ উৎপাদন করা হয় ভোর ৬টায় আট হাজার ৯৪৩ মেগাওয়াট। ওই তিন দিন সারাদিন ব্যাপী গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, মোখার কারণে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় ১৩ ও ১৪ মে গ্যাস সরবরাহ কমে গিয়েছিল। তবে ১৫ মে এলএনজি থেকে ২৮১ দশমিক ৪ এমএমসিএফ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। তবে সে গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেয়া হয়নি। আর গ্যাস না পেলে পিডিবির পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়।
তারা আরও জানান, কয়লা সংকটে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকা বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে। তবে রামপাল এখনও বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ফার্নেস অয়েল সংকটের কারণে তেলচালিত কেন্দ্রগুলো সক্ষমতার অর্ধেকও চালানো যাচ্ছে না। ফলে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। তবে বিদ্যুৎ খাতে চাহিদার অর্ধেকও গ্যাস দেয়া হচ্ছে না।
পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, ১৩ মে আবাসিকে গ্যাস দেয়া হয় ৬০ এমএমসিএফ এবং শিল্প ও অন্যন্য খাতে এক হাজার ২৪৫ দশমিক ৪ এমএমসিএফ। ১৪ মে আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাস দেয়া হয় ৬০ দশমিক ৪ এমএমসিএফ এবং অন্যন্য খাতে এক হাজার ১৭৪ দশমিক ১ এমএমসিএফ। আর ১৫ মে আবাসিকে গ্যাস দেয়া হয় ৬৭ দশমিক ২ এমএমসিএফ এবং শিল্প ও অন্যন্য খাতে এক হাজার ৩১০ দশমিক ৬ এমএমসিএফ।
জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী খাতভিত্তিক গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এখানে পেট্রোবাংলার কিছু করার নেই। তবে এলএনজি এখনও পুরোদমে সরবরাহ শুরু হয়নি। আশা করা যায়, আগামীকাল এলএনজি সরবরাহ আরও বাড়বে। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো যাবে।