সহজ কিছু নিয়ম কমিয়ে দেয় স্ট্রোক ঝুঁকি

হাসানুজ্জামান পিয়াস: আমরা কম-বেশি ‘স্ট্রোক’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। স্ট্রোক আসলে মস্তিষ্কের একটি মারাত্মক রোগ। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে কিংবা বন্ধ হলে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় মানুষ। অসুখটির কারণে প্রতিদিন অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। অনেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। কেউ কেউ দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থাকেন। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায় স্ট্রোক বা এর ঝুঁকি কমানো যায়।

স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের। এক. মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক। এটি হেমোরেজিক স্ট্রোক নামে পরিচিত। দুই. মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বিঘিœত হওয়ার ফলে যে স্ট্রোক হয়, তা ইসকেমিক স্ট্রোক।

হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখে অন্ধকার বা অস্পষ্ট দেখা, শরীরের একপাশ অবশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া প্রভৃতি হতে পারে স্ট্রোকের লক্ষণ। এর সঙ্গে মুখ নিস্তেজ হয়ে আসতে পারে, বেঁকে যেতে পারে। কথা অসংলগ্ন হয়ে পড়ে, গিলতে কষ্ট হয়। এমনকি ভারসাম্যহীনতায় ভুগতে পারেন আক্রান্ত ব্যক্তি। উভয় স্ট্রোকের লক্ষণ সাধারণত একই ধরনের।

স্ট্রোকের বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমনÑধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, হƒৎপিণ্ডের অসুখ, এমনকি পরিবারে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে কিংবা বয়স বাড়ার সঙ্গেও স্ট্রোক হতে পারে। বয়স কিংবা বংশগত কারণ ছাড়া অন্য কারণগুলো নিয়ন্ত্রণযোগ্য। স্ট্রোক প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় স্ট্রোকের ঝুঁকি সম্পর্র্কে জানা। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা।

চলুন দেখে নেওয়া যাক, কী কী উপায় অবলম্বন করে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো যায়।

দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা স্ট্রোকের অন্যতম একটি কারণ। দুশ্চিন্তা কেবল স্ট্রোক নয়, আরও অনেক জটিল রোগের কারণও বটে। দুশ্চিন্তার কারণে দেহে অনেক রোগ বাসা বাঁধতে পারে। প্রাত্যহিক জীবনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হই আমরা। এসব সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তার পরিবর্তে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

ধূমপান, মদ বা নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার

স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা। ধূমপান ও অ্যালকোহলজাতীয় পণ্যের কোনো উপকারিতা নেই। এগুলো সর্বনাশ ডেকে আনে। দেহে স্ট্রোকসহ নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করে। এ ধরনের অভ্যাস বর্জনের মাধ্যমে সহজেই স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারেন।

চর্বিজাতীয় খাবার ত্যাগ

পরিমিতভাবে তেল বা চর্বিজাতীয় খাবার খেলে স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। চর্বিজাতীয় খাবার রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। তাই স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আর এজন্য যতদূর সম্ভব চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলার অভ্যাস করুন।

 

শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম

দিন কিংবা রাতের একটা নির্দিষ্ট সময় ব্যায়ামের পেছনে বরাদ্দ রাখুন। অথবা শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে সময় কাটান। নিয়মিত ব্যায়াম করা বা নিয়ম মেনে হাঁটাহাঁটি করে আপনি ঝুঁকি এড়াতে পারেন। ব্যায়াম কিংবা কায়িক পরিশ্রম শুধু স্ট্রোকই নয়,

দেহ-মন সতেজ করে, শরীরকে অনেক রোগবালাই থেকে দূরে রাখে।

 

উচ্চ রক্তচাপের ব্যাপারে সচেতনতা

উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। তাই একে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। অনেক ক্ষেত্রেই এর কারণ জানা যায় না। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সুষম খাবার ও ওষুধের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। লবণ উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, তাই খাবারে লবণ খাওয়া বাদ দিন। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে আসে।

 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

ডায়াবেটিসও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ খুবই ভয়ানক। এমন পরিস্থিতিতে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হয়, নতুবা অনাকাক্সিক্ষত কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রোগীর জীবনাবসানও হতে পারে। শুধু কি তাই, অনেক জটিল রোগও সৃষ্টি করে থাকে ডায়াবেটিস।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

শরীর যেন মুটিয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো যায়। তাই নিয়মিত ওজন মাপুন। দেখুন আপনার বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক আছে কি না। অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। চর্বি ও তেলজাতীয় খাবারের পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলমূল, সামুদ্রিক ও ছোট মাছ বেশি রাখুন। ফলমূল ও শাকসবজি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০