শেয়ার বিজ ডেস্ক: উত্তর কোরিয়ায় চীনের রপ্তানি চলতি বছরের এপ্রিলে বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটিতে চীনের রপ্তানি বেড়েছে ৬৯ শতাংশ, অর্থের পরিমাণে যা ১৬৬ মিলিয়ন ডলার বা ১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। খবর: রয়টার্স।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান জানার উপায় নেই; কেননা দেশটি এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করে না। তাই চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের সূত্রে এ খবর দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এপ্রিলে উত্তর কোরিয়া চীন থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে পরচুলা। এ পণ্যের আর্থিক মূল্য ১১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এরপর তারা সবচেয়ে বেশি কিনেছে হাইড্রোজেন ফসফেট সার। যার আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮৮ লাখ ৪০ হাজার ডলারে। এছাড়া আলোচিত মাসে চীন থেকে ৫০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের চাল কিনেছে উত্তর কোরিয়া।
এপ্রিলে চীন থেকে বিপুল রপ্তানি হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে উত্তর কোরিয়ায় চীনের রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৮ কোটি ডলারের মতো।
উত্তর কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার এক সংবাদপত্র ডংএ ইলবোর খবরে বলা হয়েছে, দেশটির খাদ্যসংকট সম্ভবত আরও প্রকট হয়েছে।
পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কারণে উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সাল থেকে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। এছাড়া দেশটি সচেতনভাবেও আন্তর্জাতিক পরিসর থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। চলতি বছরের প্রথম দিন স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এসআরবিএম) নিক্ষেপ করে উত্তর কোরিয়া। ২০২২ সালের প্রথম সপ্তাহেও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল দেশটি। গত বছর উত্তর কোরিয়া প্রায় ৭০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি জাতিসংঘও নিন্দা জানায়।
গত বছরে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি সাগরে নিক্ষেপ করে উত্তর কোরিয়া। ক্ষমতা গ্রহণের ১০ বছর উপলক্ষে ২০২২ সালের প্রথম দিন জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন জানান, পরমাণু অস্ত্র নয়, দেশের অর্থনৈতিক ও জীবনমান উন্নয়ন চান তিনি। এ বিষয়গুলোকে ২০২২ সালের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। অন্যসময় উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ও শত্রুদের মোকাবিলা নিয়ে বক্তব্য শোনা যেত তার কণ্ঠে। কিন্তু সেদিন নিজ দেশের জনগণের মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তবে তার মুখে ভিন্ন সুর শোনা গেলেও বাস্তবে শক্তি প্রদর্শন করেন।
পরমাণু ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কারণে ২০০৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে উত্তর কোরিয়া। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও ধারাবাহিকভাবে বিধিনিষেধ বাড়িয়েছে। পিয়ংইয়ংয়ের এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জেরে কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে।
জানা যায়, উত্তর কোরিয়ার ৯০ শতাংশ বাণিজ্য চীনের সঙ্গে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক তাদের নেই। এমনকি তাদের অর্থনীতি সম্পর্কেও তেমন কিছু জানা যায় না। দক্ষিণ কোরিয়াসহ পশ্চিমের গণমাধ্যমে অবশ্য উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি সম্পর্কে ইতিবাচক খবর প্রকাশিত হয় না। পশ্চিমের অনেক চাপ সত্ত্বেও পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসছে না দেশটি।
জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের সংবাদে জানা যায়, গত বছর দক্ষিণ কোরিয়া তার উত্তরের প্রতিবেশীকে আর্থিক সহায়তায় প্রস্তাব দেয়। তবে শর্ত ছিল, এর বিনিময়ে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস করতে হবে। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে বলেন, এই প্রস্তাব চূড়ান্ত অবাস্তব। কিম ইয়ো জং বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার এই সম্পর্কোন্নয়নের প্রস্তাব লোক দেখানো। তারা একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক কুচকাওয়াজ করছে, অন্যদিকে মুখে সম্পর্কের উন্নতির কথা বলছে।