সংকটের সময় আদানির বিদ্যুৎ পুরোটা পায়নি বাংলাদেশ!

বিশেষ প্রতিনিধি: ভারত থেকে পরীক্ষামূলক আদানির বিদ্যুৎ আসা শুরু হয় গত ৮ মার্চ। প্রায় এক মাস পর ৬ এপ্রিল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে আদানি। পরীক্ষামূলক সময় সক্ষমতার পুরোটাই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পরও এক মাস সক্ষমতার পুরোটাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে আদানি। তবে গত ১৩ মে থেকে আদানির বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। চাহিদা দিয়েও বাংলাদেশ পায়নি আদানির বিদ্যুতের পুরোটা। যদিও এ সময় বিদ্যুৎ সংকটে বাংলাদেশে লোডশেডিং চরমে পৌঁছায়।

তথ্যমতে, ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় নির্মিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কেন্দ্রটি থেকে এক হাজার ৪৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। দুই ইউনিটের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে গত ৮ মার্চ বিদ্যুৎ আসা শুরু হয়। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ আসার কথা রয়েছে আগামী জুলাই থেকে।

উৎপাদন শুরুর পর থেকে নিয়মিত ৭০০-৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল আদানি। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের সময়ে পিডিবির কাছে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে ভারতের এ কোম্পানিটি। এজন্য পিডিবিকে বিল পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার বা ১৮৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা (১ ডলার=১০৫ টাকা)। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটের বিদ্যুতের দাম পড়ে ১২ টাকার মতো (১১ দশমিক ৮৮ সেন্ট)। যদিও এ বিলের মধ্যে শুধুই কয়লার দাম ছিল। ক্যাপাসিটি চার্জ পরীক্ষামূলক সময়ের জন্য ধরা হয়নি।

রোজার মধ্যে গত এপ্রিলে রেকর্ড তাপমাত্রা ছিল। সে সময় বিদ্যুতের চাহিদাও রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায়। ওই সময়ও পূর্ণ সক্ষমতার বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে বাংলাদেশকে। তবে ১৩ মে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ হঠাৎ করেই ৪০০ মেগাওয়াটে নামে। এরপর ৩৬০-৪৪০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে থাকে ভারতের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এ বিষয়ে পিডিবিকে লিখিত কিছু জানায়নি আদানি। তবে মৌখিকভাবে কয়লা পরিবহনে সংকটের কথা জানানো হয়।

সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার আগে ১২ মে মধ্যরাতে মাতারবাড়ীর ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল দুটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধরনের সংকটের সৃষ্টি হয়। এতে ১৩ মে দুই হাজার ২৯৫ মেগাওয়াট রেকর্ড বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল। ফলে ওইদিন সারাদেশে ভয়াবহ লোডশেডিং হয়। পরের কয়েকদিন চলে এ সংকট। তবে এ সংকটের মধ্যে আদানির বিদ্যুতে পুরোটা পায়নি বাংলাদেশ। ওই সময় দৈনিক ৭০০-৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা দিলেও এসেছে ৩২৪-৪৫৫ মেগাওয়াট।

যদিও গত ২০ মে রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা বাড়িয়েছে আদানি। ২১ ও ২২ মে ৬০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে কোম্পানিটি। তবে এখনও বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এতে দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে চাহিদা দিয়ে আদানির বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, আদানি জানিয়েছে বন্দরে কয়লা নিয়ে জাহাজ অপেক্ষা করলেও তা খালাস করে ঝাড়খন্ডের গড্ডা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রেন পাচ্ছে না কোম্পানিটি। এজন্য কয়লা সংকটে সক্ষমতার পুরোটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না তারা। তবে দ্রুত কয়লা সরবরাহ পরিস্থিতি বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে কোম্পানিটি।

সূত্র জানায়, এখনও আদানির বিদ্যুতের দাম চূড়ান্ত হয়নি। তারা সর্বশেষ জানিয়েছিল বাংলাদেশের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কম দামে তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এ প্রসঙ্গে পিডিবির কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার ৫ হাজার ৫০০ গ্রেডের কয়লার দাম কমে ১০০ ডলারে নেমেছে। এতে আদানির ঝাড়খণ্ডের কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়বে ক্যাপাসিটি চার্জসহ প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ১১ টাকা। অথচ ফার্নেস অয়েলে প্রতি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১৭-১৮ টাকা। তাই কয়লা বিদ্যুৎই এখন ভরসার আশ্রয়স্থল হতে পারে। তবে কয়লা সংকটে এ সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দিতে না পারলে আদানির কী ধরনের জরিমানা হবে জানতে চাইলে তারা বলেন, চাহিদা থাকলেও ৮৫ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরের নিচে নামলে ক্যাপাসিটি চার্জ কাটার বিধান রয়েছে চুক্তিতে। বর্তমানে প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিল পরিশোধের সময় চুক্তির ওই ধারাটি অনুসরণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মে আদানি দিনে পিক আওয়ারে (দুপুর ১২টা) ৪৮২ ও রাতে পিক আওয়ারে (৯টা) ৪০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ওইদিন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়। পরের দিন তা আরও কমে দাঁড়ায় ৪০০ ও ৩৯২ মেগাওয়াট। ১৫ মে দিনে পিক আওয়ারে আদানির বিদ্যুৎ আসে ৩২৪ মেগাওয়াট ও রাতে পিক আওয়ারে ৪০১ মেগাওয়াট। পরের কয়েকদিনও একই ধরনের ধারা অব্যাহত ছিল। তবে ১৮ মে দুপুর ১২টায় আদানি কোনো বিদ্যুৎই সরবরাহ করেনি। ওইদিন রাত ৯টায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ভারতের এ কোম্পানিটি।

২০ মে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা বাড়ে। ওইদিন দুপুরে (পিক আওয়ারে) ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও রাতে পিক আওয়ারে তা বেড়ে হয় ৫৯৭ মেগাওয়াট। ২১ মে দিনে ও রাতে পিক আওয়ারে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬০৩ ও ৫৯৮ মেগাওয়াট। আর ২২ মে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬০৯ ও ৬১১ মেগাওয়াট।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০