নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এবার ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের ঘাড়ে চাপালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের সবচেয়ে গুরুত্বর বিষয়। এটা কমাতে ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন, তাদের বিশেষ করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। তারা শক্তভাবে পদক্ষেপ নিলে খেলাপি ঋণের সমস্যা কমে আসবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নীতিমালা প্রণয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।
গতকাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে গত সোমবার খেলাপি ঋণ নিয়ে এবিবির চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা ব্যাংকাররা সমাধান করবেন; সেই পর্যায়ে নেই। এ সমস্যা সমাধানে সবাইকে একসঙ্গে কাজ না করলে সমাধান করা সম্ভব নয়। এখানে আইনি সংস্কারের দরকার আছে। আদালত ও বিচারক সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর্থিক বিষয়ে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া ঋণখেলাপিদের বিষয়ে কঠোর নীতি প্রয়োগ করতে হবে।
এবিবির ওই বক্তব্যর দু’দিন পর গভর্নর খেলাপি ঋণ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন। গভর্নর আরও বলেন, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানো ও করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এটা করতে হলে আলাদা করে পরিকল্পনা করতে হবে এবং কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
আব্দুর রউফ বলেন, আমরা সফলভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প অর্জনের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল করা। এর জন্য প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এটি দেশকে নগদ টাকার লেনদেনবিহীন স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখবে। এ যাত্রায় দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে একযোগে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বিদ্যমান ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশনের ওপর জোর দিচ্ছে এবং শিগগির দেশে একটি ডিজিটাল ব্যাংক চালু করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি অনলাইন এবং রিয়েল-টাইমভিত্তিক ক্রেডিট স্কোরিং সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া আমরা আমাদের নিজস্ব জাতীয় ডেবিট কার্ড ইস্যু করার খুব কাছাকাছি।
এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, এবিবির ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সামিট বাংলাদেশে ডিজিটাল আর্থিক সেবার প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা প্রধান গতিধারাগুলো সম্পর্কে মূল্যবান পর্যবেক্ষণ দেবে। এটি দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্যে পথচলার জন্য ব্যাংকগুলো যে কৌশল নিতে পারে তা বিশ্লেষণ করবে। এছাড়া আর্থিকসেবা খাতকে প্রভাবিত করে এমন বিদ্যমান নীতি এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোগুলো নিয়ে গবেষণা করবে।
আর্থিক সেবা খাত প্রভাবিত করতে পারেÑএমন নীতি নিয়ে গবেষণা চলমান রাখতে হবে বলে পরামর্শ দেন এবিবির চেয়ারম্যান। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ও ফিনটেক কোম্পানিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সম্মেলন উপলক্ষে এবিবি ও পিডব্লিউসি যৌথভাবে ‘ব্যাংকিং ইভল্যুশন: ড্রিভেন বাই ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য গৃহীত কৌশলগুলো বিশ্লেষণে বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহীদের ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
জরিপে অংশ নেয়া ৮৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, গ্রাহক বাড়াতে মুঠোফোন ও ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা বেশি সফল। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা ব্যাংকিং সেবার কাছাকাছি আসতে পেরেছেন এবং এই সেবার প্রতি আগ্রহী হয়েছেন।
দেশের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজšে§র ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের ২৬ শতাংশ বলছেন, এমএফএস সেবাদানকারীরা উদ্ভাবনী পণ্য বাজারে নিয়ে আসার কারণে তারা এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন।
সম্মেলনে বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ আরও উপস্থিত ছিলেন ৪৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের দেড় শতাধিক কর্মকর্তা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করেন। দু’দিনব্যাপী এই সম্মেলন শেষ হবে কাল আজ।