ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য স্বতন্ত্র বোর্ড হলো ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। মাদরাসা শিক্ষার্থীরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন এই বোর্ডের মাধ্যমে। প্রায় ছয় লাখ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার নিমিত্তে ২০১৩ সালে বোর্ডটি গঠিত হয়েছে। এর আগে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার আওতাধীন হয়ে ফাজিল,  কামিল ও চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স অনুষ্ঠিত হতো। তবে সময়টি ছিল বিষাদময়। সারাদেশের অসংখ্য শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষার কারণে তখন সেশনজট লেগে থাকত। তখন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা ছিল অলীক স্বপ্ন। যাবতীয় অনিয়ম ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার মনোবৃত্তিকে কর্মজীবনের দিকে ঝাঁপিয়ে দিত। বছরের পর বছর শেষ হলেও স্নাতক কোর্সের উপসংহারে পৌঁছা যেত না। কালবিলম্বে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও পরীক্ষা ও ফলাফলের সঙ্গে দীর্ঘসূত্রতা লক্ষ্য করা যায়। এসব অসঙ্গতির কারণে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আশা ও কল্যাণ কামনায় ছিল একটি স্বতন্ত্র বোর্ড। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে ২০১৩ সালে পৃথক বোর্ড গঠিত হয়। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ছিল স্বৈরতন্ত্র অবসানের পর গণতন্ত্রের উদিত সূর্য। বিভিন্ন বোর্ডের সঙ্গে শিক্ষার মান ঠিক রেখে দেশ ও জাতি গঠনের উদ্ভাবিত শক্তি। যুগ যুগ ধরে অবিরত চলতে থাকা ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলামে নতুন ধারার শিক্ষা কার্যক্রম প্রণীত হয়। এক্ষেত্রে সুনিপুণ সিলেবাস প্রণয়ন যথাযথ সম্ভব হয়নি। সিলেবাসের মধ্যে আধুনিকায়ন করা হলেও কাক্সিক্ষত ও ভালোমানের গবেষক তৈরি করার মতো উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোকে এড়িয়ে নেয়া হয়েছে। এর ফলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্ব দিলেও মাদরাসা শিক্ষার শ্রেষ্ঠত্বকে পরিপূর্ণ মর্যাদা দেয়া হয়নি। উন্নত সিলেবাস উন্নত জাতি তৈরি করবে। সিলেবাস যদি হয় অন্তঃসারশূন্য, কার্যত যোগ্য কোনো আলেম ও গবেষক তৈরির সম্ভাবনা থাকে না। সেশনজট থেকে পরিত্রাণ প্রয়াসে স্বতন্ত্র বোর্ড তৈরি হয়েছে বটেই; তবে সমস্যাগুলো নিরসন করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের বয়স ও কর্মজীবন এবং মেধার সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ নিয়ে বিন্দুমাত্র নজর করা হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তামাশা করার নজির পাওয়া যায়। কখনও রুটিন প্রণয়নে আবার কখনও রেজিস্ট্রেশন সংবলিত বিষয়ে মনগড়া ও অদক্ষ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের আবেগ নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলায় লিপ্ত আছে। এসব সূক্ষ্ম বিষয়ে হযবরল করার মধ্য দিয়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সম্প্রতি সময়ে আমরা যদি লক্ষ্য করি, পূর্বঘোষিত নির্দেশনা অনুযায়ী ২৭ মে থেকে ফাজিল ও অনার্সের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। সময় যখনই প্রান্ত সীমায় এসেছে, তখনই আরবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বরখেলাপি করেছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করার পরপরই রুটিনে বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক হয়রানি স্বীকার হতে হলো। এটি ছিল কভিড পরবর্তী  প্রথম পরীক্ষা। দীর্ঘদিন ঘুমে বিভোর থাকার পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অযাচিত এই আচরণের কোনো যুক্তি ছিল না। সংশোধিত রুটিন দেখে পুনরায় অবাক হওয়ার কথা। কার্যত কারণে সপ্তাহখানেক  পেছানোটি অস্বাভাবিক না হলেও দীর্ঘ দুই মাস পেছানো অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ছিল। দীর্ঘদিন ধরে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম নেই, হঠাৎ পরীক্ষার রুটিন দিয়ে বিশাল এই পরিবর্তন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া রুটিন প্রণয়নের সময় জাতীয় ছুটির দিবসগুলোকে তোয়াক্কা করা হয় না। বেশ কয়েকটি দিবসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার নজিরও দেখা যায়। সব মিলিয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় দায়সারা টলমল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য ফলপ্রসূ নয়। অসংখ্য শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের জমে থাকা আশার ঘরে বিষাদের ধূলিকণা নিক্ষেপ করা হয়। তাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। বয়স ও কর্মজীবনের সঙ্গে বৃহৎ দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের জীবন আলোকিত হওয়ার বদৌলতে অন্ধকারের প্রলেপ ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় শক্ত সিদ্ধান্ত ও শিক্ষা কার্যক্রমে ভারসাম্য রাখতে না পারলে মাদরাসা শিক্ষার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।

আতিক উল্লাহ আল মাসউদ

শিক্ষার্থী

আবুতোরাব ফাজিল মাদরাসা মিরসরাই, চট্টগ্রাম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০