বিশেষ প্রতিনিধি: জ্বালানি সংকটে ধুঁকছে দেশের বিদ্যুৎ খাত। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় উচ্চহারে লোডশেডিং চলছে দিনব্যাপী। এমনকি মধ্যরাতেও মুক্তি মিলছে না এর ভোগান্তি থেকে। এর মধ্যে চার দিনে তিন দফা রেকর্ড ভাঙল সর্বোচ্চ লোডশেডিংয়ের। মোট চাহিদার ২০ থেকে ২২ শতাংশ লোডশেডিং হচ্ছে রেকর্ড গড়া সময়গুলোয়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলেন, দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে দিনের মতো গভীর রাত পর্যন্ত থাকছে গরমের তেজ। এতে মধ্যরাতেও বিদ্যুতের চাহিদা তেমন একটা কমছে না। যদিও বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাতে পিক আওয়ার ধরা হয় ৯টার সময়কে। ফলে রাত ১০টার পর থেকে কমতে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন। পরবর্তী ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন দুই হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন হ্রাস পায়। এজন্য মধ্যরাতে সর্বোচ্চ লোডশেডিং হচ্ছে।
জুনের গত কয়েক দিনের লোডশেডিং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমানে রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ লোডশেডিং হচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল (৬ জুন) রাত ১টায় লোডশেডিংয়ের নতুন রেকর্ড হয়। ওই সময় তিন হাজার ২৬৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। তবে বিকাল ৪টায় সেই রেকর্ডও ভেঙে যায়। সে সময় সর্বোচ্চ তিন হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়।
যদিও গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদিনই উচ্চহারে লোডশেডিং হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনি¤œ লোডশেডিং হয়েছিল সকাল ৭টায়। ওই সময় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ২৮৯
মেগাওয়াট। আর সকাল ৮টায় লোডশেডিং হয় দুই হাজার ৩৫৮ মেগাওয়াট। তবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাকিটা সময় লোডশেডিং দুই হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের নিচে নামেনি।
এর আগে সোমবার (৫ জুন) লোডশেডিংয়ের নতুন রেকর্ড হয়েছিল রাত ১টায়। ওই সময় তিন হাজার ২১৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। আর রাত ২টায় লোডশেডিং করা হয় তিন হাজার ১৪৩ মেগাওয়াট। এরপর কিছুটা কমলেও, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উচ্চহারে লোডশেডিং অব্যাহত ছিল। এরপর রাত ১০টা পর্যন্ত লোডশেডিং কম ছিল। পরে তা আবারও বেড়ে যায়।
তার আগে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় ৩ জুন দিবাগত রাত ১২টায়। ওই সময় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮১ মেগাওয়াট। পরবর্তী এক ঘণ্টায় অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। এতে (৪ জুন) রাত ১টায় লোডশেডিং করা হয় তিন হাজার ২৪ মেগাওয়াট। আর রাত ২টায় লোডশেডিং করা হয় দুই হাজার ৯১২ মেগাওয়াট। তাপমাত্রা কমায় এরপর ধীরে ধীরে লোডশেডিং কমে আসে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বোচ্চ লোডশেডিংয়ের সময় সাধারণত বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমে যায় সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। তবে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি উৎপাদন করা হয়। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে সারাদিনই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে সাড়ে ১১ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট।
পিডিবির তথ্যমতে, গতকাল বিকাল ৪টায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৪৫৮ মেগাওয়াট। আর লোডশেডিং হয় তিন হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট, যা ওই সময়ের চাহিদার ২২ দশমিক ২৯ শতাংশ। একইভাবে ৫ জুন রাত ১টায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৫০৯ মেগাওয়াট। আর ওই সময় চাহিদার ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ লোডশেডিং হয়। এছাড়া ৩ জুন রাত ১২টায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৭৭৪ মেগাওয়াট। ওই সময় চাহিদার ২০ দশমিক ৭৪ শতাংশ লোডশেডিং হয়।
প্রসঙ্গত, চলমান বিদ্যুৎ সংকটের মাঝে ৩ জুন প্রথম লোডশেডিং তিন হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করে। এর আগে দেশে সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছিল গত ১৩ মে। ঘূর্ণিঘড় মোখার কারণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। ওইদিন রাত ১২টায় দুই হাজার ৯২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। এছাড়া গত ১৫ এপ্রিল দুই হাজার ৫০৬ মেগাওয়াট ও গত বছর ৮ অক্টোবর দুই হাজার ১০৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছিল; যা দেশের ইতিহাসে ওই সময়ের রেকর্ড ছিল।