দুর্যোগে কিডনি রোগীর ঝুঁকি

বিশ্ব কিডনি দিবস ছিল ৯ মার্চ। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্যÑ‘সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য: অপ্রত্যাশিত দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তা’।

এবারের প্রতিপাদ্য আমাদের মতো দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা দেশের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী। এমনিতেই আমাদের দেশে বন্যা, খরা, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রায়ই আঘাত হানে। এর ওপর বৈশ্বিক পরিবেশ বিপর্যয় দিন দিন এসব দুর্যোগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের ঝুঁকিতেও আছে আমাদের দেশ।

দুর্যোগ কিডনি, ডায়াবেটিস, হƒদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার ও দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগীদের বিপদে ঠেলে দেয়। দুর্যোগ একদিকে যেমন মানুষের ওপর চড়াও হয়, অন্যদিকে বাসস্থান, খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসাকেন্দ্র, যাতায়াত ব্যবস্থাসহ সবকিছু তছনছ করে দেয়। চিকিৎসক, নার্স ও ওষুধপত্রের তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে।

কভিড-১৯ মহামারিতে আমরা জানি, যত মানুষ কভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তার চেয়ে বেশি অকালে মারা গেছেন হƒদ্রোগ, কিডনি বৈকল্য, ক্যানসারসহ অনেক চিকিৎসাযোগ্য অসংক্রামক ব্যাধিতে এবং লকডাউন, যানবাহন ও সময়মতো চিকিৎসার অভাবে। কিডনি রোগীরা দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। সারাবিশ্বে ৮৫ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে দুই কোটির বেশি কিডনি রোগী আছেন। কিডনি বিকল হওয়ার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। সবার জন্য কিডনিস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন বিমার আওতায় আনা দরকার।

কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেলে প্রয়োজন ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন। ডায়ালাইসিস সাধারণত সপ্তাহে দু-তিন দিন করাতে হয়। দুর্যোগের কারণে ডায়ালাইসিস বন্ধ হলে মৃত্যু এগিয়ে আসবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানোর সাধ্য মানুষের নেই। তবে গবেষণা ও বিভিন্ন তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি অনেক অকালমৃত্যু ঠেকাতে পারে। আমরা যেহেতু দুর্যোগপ্রবণ দেশ, তাই জীবন, সম্পদ ও কিডনি রোগীদের রক্ষায় যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতি রাখা জরুরি। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন নীতিনির্ধারকেরা, নীতি বাস্তবায়নকারী সংস্থা, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

যেসব প্রস্তুতি জরুরি: প্রয়োজনীয় ওষুধসহ জরুরি কিটবক্স প্রস্তুত রাখা এবং কমপক্ষে তিন দিনের শুকনা খাবার সঙ্গে রাখা এবং বিকল্প ডায়ালাইসিস সেন্টার সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা নিয়ে রাখা উচিত। সাহায্যকারী নেটওয়ার্ক তৈরি করে রাখা প্রয়োজন, যেমন বন্ধু, আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় তা করা যায়। ডায়ালাইসিস পেতে দেরি হলে সাময়িক খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, যেমনÑপানি কম, মাছ-মাংস কম ও পটাশিয়ামযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

অধ্যাপক ডা. এমএ সামাদ

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কিডনি রোগ বিভাগ

আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০