শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি মাসে বলেছেন, পশ্চিমারা এখনও মস্কোর সঙ্গে প্রতারণা করছেÑবিশ্ববাজারে রাশিয়ার কৃষিপণ্য পৌঁছানোর পথে তারা বাধা সৃষ্টি করছে, তাই কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি তুলে নেয়া হবে। খবর: রয়টার্স।
তিনি বলেছেন, শস্য চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
গত বছরের জুলাইয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি (ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ) বা শস্য রপ্তানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান হামলা ও কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো অবরুদ্ধ করে রাখার জেরে বৈশ্বিক খাদ্যসংকটের আশঙ্কা দেখা দেয়। তাই শস্য চুক্তি করে রাশিয়া। চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের তিন সমুদ্রবন্দরÑচোরনোমর্স্ক, ওদেসা ও পিভদেনেই (ইয়ুঝনি) থেকে খাদ্য ও ওষুধ রপ্তানি করা যায়। এরই মধ্যে চুক্তির মেয়াদ তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ মেয়াদ বৃদ্ধি হয়েছে আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৩২ মিলিয়ন বা তিন কোটি ২০ লাখ টন পণ্য ইউক্রেন থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এই পণ্যের অধিকাংশই বিভিন্ন খাদ্যপণ্য ও গম। চুক্তির মাধ্যমে অ্যামোনিয়া সারও নিরাপদে বিভিন্ন দেশে পাঠানো সম্ভব। যদিও সারের অন্যতম এই উপাদানের কোনো জাহাজ এখনও রাশিয়ার কোনো বন্দর ছেড়ে যায়নি।
চুক্তিটি সইয়ে রাশিয়াকে রাজি করাতে তিন বছর মেয়াদি আরেকটি চুক্তিতে সম্মত হয় জাতিসংঘ। দ্বিতীয় সেই চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ার নিজস্ব খাদ্যপণ্য ও সারের চালান অন্যান্য দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধা এলে তা দূর করায় জাতিসংঘ সহযোগিতা করবে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার খাদ্যশস্য ও সার নেই। তবে মস্কো বলেছে, অর্থ পরিশোধ, লজিস্টিকস ও বিমার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় শিপমেন্ট ব্যাহত হচ্ছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক গত সপ্তাহে বলেন, গত মাসগুলোয় রাশিয়ার রপ্তানি পরিস্থিতির বাস্তব অগ্রগতি ঘটেছে। তবে এখনও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখব না।
খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভুগছে গরিব দেশগুলো। গত বছরের মার্চে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে, কারণ খাদ্যশস্যের ৫০ শতাংশ আসে ইউক্রেন থেকে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আফ্রিকা ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৩৭০ কোটি টন গম আমদানি করে রাশিয়া থেকে, যা আফ্রিকার মোট গম আমদানির ৩২ শতাংশ। একই সময়ে ইউক্রেন থেকে ১৪০ কোটি টন আমদানি করে, যা মহাদেশটির মোট আমদানির ১২ শতাংশ।
গত বছর জাতিসংঘ জানায়, ৩৬টি দেশ তাদের চাহিদার অর্ধেকের বেশি গম আমদানি করে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। এসব দেশের তালিকায় রয়েছে লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া ও কঙ্গোর মতো গরিব ও নাজুক অবস্থায় থাকা দেশ।
কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তির আওতায় ৬ লাখ ২৫ হাজারের বেশি খাদ্যশস্য সংগ্রহ করেছে ডব্লিউএফপি। এসব খাদ্যশস্য সংস্থার সহায়তায় আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনে সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়েছে। ২০২২ সালে ডব্লিউএফপি তাদের বৈশ্বিক চাহিদার অর্ধেকের বেশি গম ইউক্রেন থেকে সংগ্রহ করেছে।
পুতিনের অভিযোগ, পশ্চিমাদের প্রতারণার কারণে রাশিয়ার নিজেদের পণ্য রপ্তানি এখনও বাধার সম্মুখীন। তবে রাশিয়ার এ অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র খারিজ করে দিয়েছে। জাতিসংঘে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড গত মাসে বলেন, একই হারে খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানি করছে রাশিয়া।
পুতিন বলছেন, রাশিয়া চুক্তিতে রাজি হয়েছিল আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর কথা চিন্তা করে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তির অধীনে আমদানির প্রায় তিন শতাংশ যায় কম আয়ের দেশগুলোয়, উচ্চ আয়ের দেশগুলোয় যায় প্রায় ৪৪ শতাংশ এবং বাকিটা যায় মধ্যম আয়ের দেশগুলোয়।