যশোরে চামড়া কিনে বিপাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর : চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম কোরবানির ঈদ। সারা বছর চামড়া ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় থাকেন এ সময়ের জন্য। খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ চামড়ার হাট যশোরের রাজারহাটে শনিবার ছিল ঈদ-পরবর্তী প্রথম হাট। এ হাটে ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া আনলেও দাম নিয়ে ছিল চরম অসন্তোষ। তারা বলছে, বেশি দামে কিনতে হয়েছে চামড়া; তাছাড়া, লবণের দাম বেশি। কিন্তু আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম মূল্যে চামড়া কিনছেন। সব মিলিয়ে মাথায় হাত ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের।

তবে আড়তদাররা বলছেন, ‘ট্যানারি মালিকদের ওপর নির্ভর করছে চামড়ার ভবিষ্যৎ। মানভেদে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে। চামড়ার মান যাচাই না করেই বাড়তি দামে কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন।’

যশোরের রাজারহাট দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম চামড়ার হাট। সপ্তাহের দুই দিন এ হাটে চামড়া বেচাকেনা হয়। এ হাটে যশোরসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ও নাটোরের বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন। এখানে ছোট-বড় মিলে ৩ শতাধিক চামড়ার আড়ত রয়েছে। সারা বছরই এ হাটে চামড়া বেচাকেনা হলেও কোরবানির ঈদের মৌসুমি বাজার ধরতে অপেক্ষায় থাকেন ব্যবসায়ীরা।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, লবণের দাম বৃদ্ধির কারণে গ্রামগঞ্জ থেকে কেনা চামড়া সংরক্ষণের খরচ বেড়েছে। চামড়া কেনা এবং লবণের দাম যোগ করে একটি চামড়ার যে দাম দাঁড়িয়েছে; সেই দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না।

শনিবার যশোরের রাজারহাটে ছাগলের চামড়া প্রতি পিস ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়েছে। আর গরুর চামড়া ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। লবণের দাম বেশি এবং শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় অনেকের পুঁজি বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছেÑএমনটাই বলছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

শনিবারের হাটে নড়াইলের মৌসুমি ব্যবসায়ী জয়ন্ত কুমার বলেন, সরকার ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ৪৫-৪৮ টাকা। আমরা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে কাঁচা চামড়া কিনেছি। সেই চামড়া লবণ, শ্রমিক দিয়ে ৪৫ টাকা খরচ হয়েছে। ঈদের দুই দিন পর চামড়া হাটে নিয়ে এসে দাম পাচ্ছি ২৫-৩০ টাকা। প্রতি ফুট চামড়াতেই ১৫ থেকে ২০ টাকা লোকসান হচ্ছে।

যশোরের মণিরামপুরের মৌসুমি ব্যবসায়ী হরেন বিশ্বাস বলেন, হাটে ৫০০ পিস গরুর চামড়া এনেছি। প্রতিটি চামড়া কিনেছি ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। লবণ, শ্রমিক খরচ ও পরিবহন বাবদ প্রতিটি চামড়ায় আরও ২০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। আজকের হাটে বড় চামড়া বিক্রি করেছি ৮০০ টাকা এবং ছোটগুলো ৪০০ টাকা দরে। এর মধ্যে ৫০টি চামড়া বিক্রি হয়নি।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, অদক্ষতার কারণেই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন। খারাপ মানের চামড়া বেশি দামে ক্রয় করায় মোকামে এসে ধরা খাচ্ছেন তারা। বাজার মন্দ নয়, সরকারি নির্ধারিত দামেই চামড়া বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় আড়তদাররা বলছেন, সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও চামড়ার মান নির্ধারণ করে দেননি। এজন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা মান যাচাই করেই চামড়ার দাম নির্ধারণ করছেন। যারা ভালো মানের চামড়া এনেছেন, তারা দামও ভালো পাচ্ছেন।

আড়তদার হাশেম মিয়া বলেন, ঈদের দিন দুপুর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৩ হাজার গরুর চামড়া কিনেছি। মানভেদে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে চামড়া কিনেছি। ৩০ ফুটের একটি গরুর চামড়া সংরক্ষণ করতে ৫ কেজি লবণ লাগে। এ বছর লবণের দাম বেশি। সংরক্ষণ খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। ট্যানারির মালিকরা তো বেশি দাম দেবে না। যে কারণে বেশি দামে চামড়া কেনাও যাচ্ছে না।

যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন মুকুল বলেন, ঈদের দিন দুপুর ও শুক্রবার ১ কোটি টাকার কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে। আর শনিবার ১০ হাজার গরু ও ৩০ হাজার ছাগলের চামড়া এসেছে, যা প্রায় কোটি টাকায় বেচাকেনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও দাবি করেন, রাজারহাট চামড়ার হাটের কোনো সিন্ডিকেট নেই। এখানে প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই বেচাকেনা হচ্ছে। চামড়া ভারতে পাচার হওয়ারও কোনো সুযোগও নেই। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। এই হাটে ঈদ মৌসুমে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার অধিক চামড়া বেচাকেনা হয়। চামড়া খাতকে চাঙা করতে হলে তৃণমূলের ব্যবসায়ীদের ঋণ সুবিধা ও কাঁচা চামড়া রপ্তানির উদ্যোগ নিতে হবে।.

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০