কমেছে কনটেইনার, বেড়েছে কার্গো হ্যান্ডলিং ও রাজস্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে। একই সময়ে বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিংও বেড়েছে। তবে কমেছে কনটেইনার হ্যান্ডলিং। বিলাসদ্রব্যের চেয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বেশি আমদানি হওয়ায় এ পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে করেন বন্দরের কর্মকর্তারা। কারণ কনটেইনারে বেশিরভাগ বিলাসদ্রব্য এবং কার্গোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি হয়। এছাড়া অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬১ হাজার ৪৬৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের রাজস্ব আদায় ছিল ৫৯ হাজার ১৫৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয় বেড়েছে ৩.৯০ শতাংশ।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে ওঠানামা মিলিয়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একক)। এর আগের অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮ টিইইউস। সে হিসাবে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৪ টিইইউস কনটেইনার কম হ্যান্ডলিং করা হয়। গেল অর্থবছরে বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৩ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৮১ লাখ ৭৪ হাজার ১৬০ টন। অর্থাৎ এক বছরে কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে এক লাখ ২২ হাজার ৫৮৩ টন। এছাড়া বিদায়ী অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২৫৩টি। তার আগের অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২৩১টি। সে হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে বন্দরে ২২টি জাহাজ বেশি আগমন করে।

কাস্টম হাউসের তথ্যমতে, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের ইতিহাসে এবার ই সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণ। প্রতিষ্ঠানটির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুন মাসে ছয় হাজার ৩৬৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এর আগে মে মাসে ৬ হাজার ৩০৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা, এপ্রিলে ৪ হাজার ৫৩৪ কোটি ৫ লাখ টাকা, মার্চে ৫ হাজার ৫২ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ফেব্র–য়ারিতে ৪ হাজার ২৮৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং জানুয়ারিতে ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল। এছাড়া ডিসেম্বরে ৪ হাজার ৩৮৮ কোটি ৫ লাখ টাকা, নভেম্বরে ৫ হাজার ৪৭৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, অক্টোবরে ৪ হাজার ৯১৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৫ হাজার ১০৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা, আগস্টে ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং জুলাই মাসে আদায় হয় ৪ হাজার ৭৮১ কোটি ২১ লাখ টাকা। অপরদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ছিল ৫৯ হাজার ১৫৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। 

অপরদিকে খাতভিত্তিক রাজস্ব আয় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডিজেল আমদানি থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ করা হয় ছয় হাজার ৭৬২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণকারী খাত হলো ফার্নেস অয়েল। এ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৪ হাজার ১৮৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এরপর সিমেন্টের ক্লিংকার থেকে রাজস্ব আহরণ হয়েছে দুই হাজার ৭৩৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এভাবে আপেল, কমলা, খেজুর ও বাদাম থেকে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। একইভাবে পাথর আমদানি থেকে এক হাজার ৩১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ও বিটুমিন থেকে এক হাজার ১৩২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, হট রোল অর্থাৎ এইচআর কয়েল থেকে এক হাজার ২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং পাম্প অয়েল থেকে ৮৩৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, বিলাসবহুল আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের কারণে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আদায় কম ছিল। তবে শেষের কয়েক মাসে অর্থাৎ বাজেটের আগে গাড়িসহ কিছু পণ্যের আমদানি হঠাৎ বেড়ে যায়। এ কারণে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। এছাড়া চোরাচালান এবং শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কার্যকর নানা পদক্ষেপও রাজস্ব আদায় বাড়ার কারণ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, বিলাসবহুল দ্রব্য আমদানি কম ছিল। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি হয়েছে। সবমিলিয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক দিক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০