২০২২ সালে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লেও কমেছে স্টক

বিশেষ প্রতিনিধি: প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণে বরাবরই পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তবে গত বছর সে চিত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। এ সময় দেশে এফডিআই ফ্লো (প্রবাহ) বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এফডিআই এসেছে ২০২২ সালে। দ্বিতীয়বারের মতো ৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে বিদেশি বিনিয়োগ। তবে এ সময় দেশ থেকে পুরোনো বিনিয়োগ চলে যায়। ফলে এফডিআই স্টক না বেড়ে উল্টো কমে গেছে।

জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৩’তে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ বিশ্বব্যাপী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে। এতে দেখা যায়, গত আট বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো এফডিআই স্টক কমল বাংলাদেশে। তবে এফডিআই স্টক কমে যাওয়াকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নতুন বিনিয়োগ এলেও পুরোনো বিনিয়োগ চলে যাওয়ায় এফডিআই স্টক কমেছে। তবে চলমান সংকটের সময় এটি অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে সম্প্রতি মুডি’স ঋণমান কমানোয় বাংলাদেশকে নন-ইনভেস্টমেন্ট (অ-বিনিয়োগ) গ্রেডের অন্তর্ভুক্ত করেছে আঙ্কটাড। এতে বাংলাদেশে বিনিয়োগকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গত বছর বাংলাদেশে এফডিআই প্রবাহের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৮৯৬ বিলিয়ন ও ২০২০ সালে ২ দশমিক ৫৬৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ পরপর দুই বছর দেশে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছে। তার আগে ২০১৯ সালে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ২ দশমিক ৮৭৪ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮ সালে ৩ দশমিক ৬১৩ বিলিয়ন ডলার। সেটি ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এফডিআই।

যদিও গত বছর এফডিআই স্টক ৪২৪ মিলিয়ন ডলার কমে গেছে। ২০২২ সাল শেষে দেশে এফডিআই স্টক দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ১৫৮ বিলিয়ন ডলার; ২০২১ সালে যা ছিল ২১ দশমিক ৫৮২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২০২০ সাল শেষে দেশে এফডিআই স্টক দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৩৭৫ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৯ সালে ১৬ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার। তবে ২০১৯ সালে এফডিআই স্টক কমেছিল ৬৭৭ মিলিয়ন ডলার। কারণ ২০১৮ সাল শেষে দেশে এফডিআই স্টক ছিল ১৭ দশমিক ০৬২ বিলিয়ন ডলার।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দেশ থেকে পুরোনো বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে। গ্রিন ফিল্ড বিনিয়োগ কম হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য ভালো নয়। কারণ বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। আর এবার বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চ পর্যায়ে ধরা হয়েছে। তাই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বিদেশি বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষত অর্থনৈতিক অঞ্চল যেগুলো করা হয়েছে, সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেসব সেবা দেয়ার কথা তা দেয়া হচ্ছে না। তা অতি দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ দ্রুত বাড়বে।’

আঙ্কটাডের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে দেশে এফডিআই এসেছিল ২ দশমিক ১৫২ বিলিয়ন ডলার, ২০১৬ সালে ২ দশমিক ৩৩৩ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৫ সালে ২ দশমিক ২৩৫ বিলিয়ন ডলার। ওই বছরই প্রথম এফডিআই ২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। আর ওই তিন বছর দেশে এফডিআই স্টক ছিল যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৫৫৭ বিলিয়ন ডলার, ১৪ দশমিক ৫৩৯ বিলিয়ন ডলার এবং ১২ দশমিক ৯১২ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এফডিআই আকর্ষণে গত বছর শীর্ষে ছিল ইথিওপিয়া। দেশটিতে ৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার এফডিআই গেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কম্বোডিয়া পেয়েছে ৩ দশমিক ৫৬৯ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও বাংলাদেশকে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নন-ইনভেস্টমেন্ট গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চতুর্থ অবস্থানে থাকা সেনেগাল ২ দশমিক ৫৮৬ বিলিয়ন এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকে মোজাম্বিক ১ দশমিক ৯৭৫ বিলিয়ন ডলার এফডিআই পেয়েছে।

গ্রিনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে তানজানিয়া। আর বাংলাদেশের পরে রয়েছেÑযথাক্রমে সেনেগাল, কম্বোডিয়া ও রুয়ান্ডা। বাংলাদেশে গ্রিনফিল্ড বিনিয়োগে বেশি এসেছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্ন দেশের বেশকিছু সংস্কারের উদাহরণও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বাংলাদেশের ‘প্যাটেন্ট আইন ২০২২’ রয়েছে এ তালিকায়।

যদিও এক বছর বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে খুব বেশি আনন্দিত হওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অবকাঠামো ঘাটতিতে এলডিসিভুক্ত অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ আশানুরূপ বিদেশি বিনিয়োগ পাচ্ছিল না। তবে এখন অবকাঠামো খাতেই বিশেষত বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বড় বিনিয়োগ আসছে। পাশাপাশি তৈরি পোশাক, ইস্পাতসহ অন্যান্য শিল্পেও বিনিয়োগ ধীরে ধীরে বাড়ছে। অবশ্যই বিষয়টি ইতিবাচক। তবে এ প্রবাহ আরও বাড়াতে সরকারের নীতি সহায়তার পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামো বিশেষত সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বন্দর অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহে বড় উল্লম্ফনে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে শীর্ষে থাকা ভারতে গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ ছিল ৪৯ দশমিক ৩৫৫ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে ১ দশমিক ৩৯৯ বিলিয়ন ও চতুর্থ অবস্থানে থাকা শ্রীলঙ্কায় ৮৯৮ মিলিয়ন ডলার এফডিআই গেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০