দুই দিনে সরকারের ব্যাংকঋণ ১৫ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদায়ী অর্থবছরের শেষ দিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অস্বাভাবিকভাবে ব্যাংকঋণ নেয়া শুরু করে সরকার। এর মধ্যে গত ২১ ও ২২ জুন দুই দিনেই ১৫ হাজার ২৩৩ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। যদিও জুনের প্রথম ২০ দিন নেয়া হয়েছিল প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। আর এ দুই দিনের পুরো অর্থ জোগান দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের যে উৎস থেকে রাজস্ব বাড়ানো উচিত, সেখান থেকে আয় না হওয়ায় কারণে ঘাটতি বাজেট মেটাতে শেষ দিকে ব্যাংকঋণ বাড়িয়েছে সরকার। এছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি নেতিবাচক ধারায় নেমেছে। বৈদেশিক ঋণ ছাড়েও গতি নেই। ফলে সরকার বাধ্য হয়েই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৩১ মে পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক থেকে নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। আর ২০ জুন তা বেড়ে এক লাখ ১২ হাজার ২৪১ কোটি টাকা  দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ জুনের প্রথম ২০ দিন সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। তবে ২২ জুন সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই দিনে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিট ঋণ নিয়েছে ১৫ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ঋণ জোগান দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই দুই দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো ৪৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিগত কয়েক বছরে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে, তবে এটাই সর্বোচ্চ। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নিয়েছে মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সংকট থাকার কারণে। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের মুখে পড়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে নতুন টাকা ছাপিয়ে দিতে হয়। এতে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে তা মূল্যস্ফীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ যত বাড়বে, মূল্যস্ফীতি তত বৃদ্ধি পাবে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ঋণের অর্থ টাকা ছাপিয়ে দিচ্ছে। এ বছর বাংলাদেশ ব্যাংককে ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নের সূত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এত পরিমাণ ঋণ নেয়া হয়নি। খুবই সামান্য নেয়া হতো। সেটা ক্যাশ না থাকার কারণে এক দিনের জন্য হতো। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া নীতিধারা শুরু হয়েছে। এ নীতিধারা চলতে থাকলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। বরং মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে।

গত অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ বেড়ে এক লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। তবে গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে সরকারের ব্যাংকঋণ। গত অর্থবছরের ২২ জুন পর্যন্ত সরকারের নিট ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি। এক লাখ ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক জোগান দিয়েছে এক লাখ এক হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা, যার পুরোটাই ছাপা হয়েছে।

সব মিলিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় ২২ জুন পর্যন্ত সরকারের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে চার লাখ এক হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থিতি এক লাখ ৬১ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। বাকি দুই লাখ ৩৯ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর ঘাটতি বাজেট মেটাতে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০