প্রতিনিধি, গাংনী (মেহেরপুর) : স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ কুক্ষিগত করে অবশেষে জš§দাত্রী মাকে রাস্তায় ফেলে গেছে সন্তানরা। অসহায় বৃদ্ধের ঠাঁই মিলেছে রাস্তায়। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার সকালে মেহেরপুরের গাংনীর কল্যাণপুর গ্রামের উত্তরপাড়ায়। কেউ এগিয়ে আসেননি বৃদ্ধাকে রক্ষায়। তবে প্রতিবেশীরা প্রতিবাদ না করলেও
সন্তানদের অমানবিক অত্যাচারের বিস্তর বর্ণনা দেন। সেই সঙ্গে একটি বাড়িতে আশ্রয় দেন। তবে পুলিশ বলছে, কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুরের গাংনী শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লির নাম কল্যাণপুর। গ্রামের মৃত খেলাফত মণ্ডলের স্ত্রী এই বৃদ্ধা সাহেরা খাতুন। বয়স আশির ঊর্ধ্বে। সংসারে রয়েছে তিন ছেলে ও ৫ মেয়ে। সবাই স্বাবলম্বী। সন্তানদের বড় করে তুলতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। আশা ছিল, সন্তানরা বৃদ্ধ বয়সে কাজকাম করে খাওয়াবে আর মৃত্যুর সময় সৃষ্টিকর্তার নামটি কানে দেবে। কিন্তু না, তা হয়নি। হতভাগা মায়ের জীবনে নেমে এসেছে সুখের বদলে দুঃখের ঘনঘটা। ছেলেরা কৌশলে ৫ বোনকে ফাঁকি দিয়ে স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি লিখে নেয়। এরপর থেকে নির্মম নির্যাতন শুরু করে ছেলে ও তাদের স্ত্রীরা। সম্পদ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মেয়েরাও খোঁজ নেয় না মায়ের। অবশেষে দু’মুঠো ভাত না দিয়ে বাক-প্রতিবন্ধী মাকে ফেলে গেছে রাস্তায়। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে আর্তনাদ করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি তাকে রক্ষায়।
প্রতিবেশী বাবলু জানান, মায়ের ভরণপোষণ ও ভাত দেয়ার বিষয়ে তিন ভাইয়ের মধ্যে সমঝোতা হয়। ১০ দিন করে একেক সন্তান মাকে খাওয়াবে ও যতœ নেবে। অথচ কেউ সঠিকভাবে তা করে না। যার কাছেই যাক সে-ই নির্যাতন করে। বর্তমানে মেজ ছেলের কাছে রয়েছেন মা সাহেরা। কিন্তু ছেলেও তার স্ত্রী রুপিয়া খাতুন সাহেরাকে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় ফেলে যায়। একই কথা জানালেন আহসান হাবিব বাচ্চু।
সাহেরা খাতুনের দেবর হারেজ আলী জানান, সাহেরা খাতুনের স্বামী মারা যাওয়ার সময় ৪০ হাজার টাকা দিয়ে যান স্ত্রীকে তার দাফন-কাফনের জন্য। হারেজ আলীসহ কয়েকজন ওই টাকা স্থানীয় কাউছার মেম্বারের কাছে জমা দেন। কিন্তু সেই টাকারও হদিস নেই। আবার বয়স্ক ভাতা প্রাপ্ত টাকাগুলোও সন্তানরা ভাগ করে নিয়ে নেয়।
এ ব্যাপারে বৃদ্ধা সাহেরা খাতুনের কোনো ছেলে ও তাদের স্ত্রীরা কোনো কথা বলতে চায়নি। এদিকে ৪০ হাজার টাকা গচ্ছিত রাখার ব্যাপারে কাউছার মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
