নিজস্ব প্রতিবেদক:ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়নে প্রতি অর্থবছরই দুই উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সরকার। প্রথমত, সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও দ্বিতীয়ত, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া। নানা শর্তের কারণে সঞ্চয়পত্রে বিক্রি গত কয়েক বছরে কমে গেছে। তাই ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের ব্যাংক খাত থেকে রেকর্ড এক লাখ ২৪ হাজার ১২২ কোটি টাকা নিট ঋণ নিয়েছে সরকার।
চার বছর আগেও ব্যাংক থেকে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার পরিমাণ ছিল মাত্র ১৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার অর্থবছরের ব্যবধানে সরকার ব্যাংক থেকে ৬২৭ শতাংশ ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যে উৎস থেকে রাজস্ব বাড়ানো উচিত, সেখান থেকে আয় না হওয়ার কারণে ঘাটতি বাজেট মেটাতে লক্ষ্যের চেয়ে বেশি ব্যাংকঋণ নিয়েছে সরকার। এছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি নেতিবাচক ধারায় নেমেছে। বৈদেশিক ঋণ ছাড়েও গতি নেই। ফলে সরকার বাধ্য হয়েই গত অর্থবছর ব্যাংকব্যবস্থা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছর সরকারের ব্যাংক খাত থেকে নিট ঋণ নিয়েছিল ১৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছর (২০১৯-২০) নিয়েছে ৭০ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছর ঋণ নেয়ার পরিমাণ কমে আসে। ওই অর্থবছর ঋণ ছিল ২৬ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংক তা আবার এক লাফে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকায় ওঠে। আর বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ কর্মদিবস ২৬ জুন পর্যন্ত নিট এক লাখ ২৪ হাজার ১২২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যয়ের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমে যাওয়া ও রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। তবে অর্থবছর শেষে সেই লক্ষ্য ছাড়িয়েছে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আট হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা বেশি। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর সরকারের ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সরবরাহ করেছে ৯৮ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। চার বছর আগে সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৯ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি সরকারকে ঋণ সরবরাহ করার মানে টাকা ছাপিয়ে অর্থ দেয়া, যা মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেয়। গত অর্থবছর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছে ২৫ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।
বিদায়ী অর্থবছর শেষে ব্যাংকব্যবস্থায় সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দিয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা।
