নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্রম আইন না মেনে গত এক বছর ধরে কর্মী ছাঁটাই করে আসছে টেলিকম প্রতিষ্ঠান এরিকসন বাংলাদেশ। এর প্রতিবাদ করতে এবার অনশনে বসেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। চাকরিতে পুনর্বহাল করার দাবিতে গত সোমবার দুপুর থেকে রাজধানীর গুলশানে এরিকসন বাংলাদেশ লিমিটেডের কার্যালয়ে অনশন শুরু করে চাকরিতে পুনর্বহাল করার দাবি জানান কর্মীরা। পুনর্বহাল না করা হলে সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ চাইছেন তারা।
কর্মীরা জানান, গত ১৭ আগস্ট ৬২ কর্মচারীকে মৌখিকভাবে ৩১ আগস্টের পর চাকরিতে যোগ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ‘বিনা নোটিসে ঈদের আগে এভাবে চাকরি হারালে আমরা কোথায় যাবো? পরিবার নিয়ে পথে বসা ছাড়া আর কোনো পথ আমাদের খোলা নেই। ঈদ তো দূরের কথা, আগামী মাসে বাড়িভাড়া ও ছেলেমেয়েদের স্কুলের ফি দেওয়ার টাকাটাও আমাদের হাতে নেই।’ এভাবেই অসহায়ত্বের কথা জানান কর্মীরা।
এরিকসন বাংলাদেশের ইমপ্লিমেন্টেশন কো-অর্ডিনেটর লুৎফর রহমান আনন্দ বলেন, ১০ বছর ধরে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত। শুরুতে স্থায়ী নিয়োগ পেলেও এক বছর পর তার নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক করা হয়। চাকরিচ্যুত কর্মচারী সবাই চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করছিলেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে এরিকসন বাংলাদেশের হেড অব কান্ট্রি ইউনিট আবদুস সালামের সঙ্গে ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, গত বছর প্রতিষ্ঠানটির কর্মীসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে আটশর মতো, যার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কর্মী ছিল প্রায় ৫৫০ জন। এদের বাকি কর্মী ছিল তৃতীয় পক্ষের। গত ফেব্রুয়ারিতে এক বৈঠকে জনবল আরও কমিয়ে আনার বিষয়ে আভাস দেন এরিকসনের কান্ট্রি ডিরেক্টর। পরবর্তীকালে আরও ৬০ কর্মীকে ছাঁটাই করে প্রতিষ্ঠানটি। আর এ পর্যন্ত সব মিলে প্রায় ৫৬৯ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মীসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮০ জন।
এদিকে চাকরিচ্যুত কর্মীদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনার উদ্যোগ নিলেও সাড়া দেয়নি এরিকসন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। এদিকে গতকাল কার্যালয়ে আসেননি প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এমনকি প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীকে পাঠানো এক ই-মেইলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অফিসে না আসার জন্য অনুরোধ করেছেন এরিকসনের বাংলাদেশসহ তিনটি দেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টড অ্যাস্টন এবং ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ম্যানেজার আবদুস সালাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল থেকে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন এরিকসনের কর্মীরা।
ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির আরও জনবল কমিয়ে আনার ঘোষণা দিলে এর প্রতিবাদে এরিকসন বাংলাদেশের কার্যালয়ের সামনে গতকাল বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কর্মীরা। তবে নিজেদের দাবি আদায়ে শ্রম পরিদফতর, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনসহ (বিটিআরসি) এরিকসনের আঞ্চলিক কার্যালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছেন এরিকসনের কর্মীরা।
ছাঁটাই হওয়া আরেক কর্মচারী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি এখানে ছয় বছর ধরে আছি। চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের এখানে চূড়ান্তভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
অনশনরত কর্মীরা জানান, তারা বোনাস স্থায়ী কর্মচারীদের তুলনায় অর্ধেক পেলেও ওভারটাইম ফি-সহ যাতায়াত, পারফরম্যান্স বোনাস ও প্রফিট শেয়ারও পেতেন না।
Add Comment