প্রখ্যাত অভিনেতা ও পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা রাইসুল ইসলাম আসাদের আজ ৭০তম জন্মদিন। তার পুরো নাম আসাদুজ্জামান মোহাম্মাদ রাইসুল ইসলাম। তিনি ১৯৫৩ সালের ১৫ জুলাই ঢাকার পুরানা পল্টনে জন্মগ্রহণ করেন। কলেজিয়েট স্কুলে তার লেখাপড়া শুরু হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। রাইসুল ইসলাম আসাদ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেন। নাম লেখান সে সময়কার ঢাকার তরুণদের মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন আরবান গেরিলা দল ক্রাক প্লাটুনে। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ২নং সেক্টরের অধীন একটি স্বতন্ত্র গেরিলা দল, যারা মূলত গণবাহিনীর অংশ বলে পরিচিত। আসাদ ২নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেশ কিছু সফল অভিযানে অংশ নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি যুক্ত হন মঞ্চ নাটকের সঙ্গে। ১৯৭২ সালে ‘আমি রাজা হব না’ এবং ‘সর্পবিষয়ক’ নামের দুটি মঞ্চ নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৭৩ সালে আসাদ কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে গঠন করেন ‘ঢাকা থিয়েটার’। এর পর থেকে একের পর এক সাড়াজাগানো নাটকে তার অভিনয়। বহু টেলিভিশন নাটকেও তিনি অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকÑএইসব দিনরাত্রি, সংশপ্তক, হƒদয়ের ছবি, ১৯৭১ (টেলিফিল্ম), পৌষ-ফাগুনের পালা, চিঠি আসে না ইত্যাদি। আসাদ নাটক পরিচালনাও করেছেন। মঞ্চনাটক ছাড়াও আসাদ টেলিভিশন ও বেতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। ১৯৭৩ সালে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার বড়পর্দায় যাত্রা শুরু। অভিনয় করেছেন ৫০টির অধিক চলচ্চিত্রে। এর মধ্যে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘লাল দরজা’, ‘লালন’, ‘পতং’ (হিন্দি), ‘মনের মানুষ’, ‘হঠাৎ বৃষ্টি’, ‘ঘুড্ডি’, ‘একই বৃত্তে’, ‘উত্তরা’, ‘কীর্তনখোলা’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘দুখাই’, ‘লালসালু’, ‘মাটির পিঞ্জিরা’, ‘মৃত্তিকা মায়া’ ও শিশুতোষ চলচ্চিত্র গাড়িওয়ালা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। চলচ্চিত্রের জন্য গানও গেয়েছেন। ২০১০ সালে তিনি ধারাবাহিক নাটক ‘আলো-ছায়া’ পরিচালনা করেন। তিনি পদ্মা নদীর মাঝি, অন্যজীবন, লালসালু, দুখাই, ঘানি ও মৃত্তিকা মায়ায় (মনোনীত) অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়া একাধিকবার বাচসাস, আনন্দলোক ও প্রযোজক সমিতি পুরস্কার এবং ভারতের সম্মানজনক ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডসহ (এফজেএ) বহু সম্মাননা অর্জন করেন। ২০২০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
কাজী সালমা সুলতানা