বাংলাদেশের এক অকৃত্রিম বন্ধু, সংবাদদাতা, উপস্থাপক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা সায়মন ড্রিং। তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন রয়টার্স, টেলিগ্রাফ ও বিবিসিতে। ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ ইংল্যন্ডের ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রতিবেদক সায়মন ড্রিং ঢাকায় আসেন। তিনিই প্রথম ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যার তথ্য ও প্রতিবেদন ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ লন্ডনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় তুলে ধরেন। তার ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামে প্রতিবেদন বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজুড়ে জনমত সৃষ্টিতে সহায়তা করে। সাইমন ড্রিং ১৯৪৫ সালের ১১ জানুয়ারি ইংল্যান্ডে নরফোকের ফাকেনহ্যামে জš§গ্রহণ করেন। ১৮ বছর বয়স থেকে তিনি সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। ডেইলি টেলিগ্রাফ ও বিবিসি টেলিভিশন নিউজের বৈদেশিক সংবাদদাতা হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি দীর্ঘসময় কর্মরত ছিলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর প্রতিবেদন করে তিনি খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তানি সামরিক সরকার ৪০ বিদেশি সাংবাদিককে ঢাকা আসার অনুমতি দেয়। ২৫ মার্চ যুদ্ধ শুরু হলে সাংবাদিকদের অনেকেই ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হন। পাকিস্তানি সামরিক আইন অমান্য করে সাইমন ড্রিং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে লুকিয়ে প্রত্যক্ষ করেন গণহত্যার বাস্তব চিত্র। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় ব্যাংককে গিয়ে সেসব গণহত্যার ছবি দিয়ে প্রকাশ করেন ‘ট্যাংকস ক্রাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান’, যা সে সময় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর সঙ্গে তিনিও ঢাকায় আসেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সায়মন ড্রিং ১৯৯৭ সালে বিবিসি ছেড়ে বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টেলিভিশনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যুক্ত হন। তাকে বলা হয় বাংলাদেশে ব্রডকাস্ট সাংবাদিকতার জনক। ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার একুশে টেলিভিশন সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করলে সায়মন ড্রিং বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। সাইমন ড্রিং দাতব্য তহবিল দ্য রেস এসেইন্ট টাইম ও ‘স্পোর্ট এইড’ গড়ে তোলেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতনের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে অর্জন করেন ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টার অব দ্য ইয়ার পুরস্কার। ২০১২ সালের মার্চে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ও মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’য় ভূষিত করে। তিনি ২০২১ সালের ১৬ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা