সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: কয়েক বছর আগে দেশের ইস্পাত কারখানাগুলো সম্মিলিতভাবে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছিল। কিন্তু গত দেড় বছর চলমান ডলার সংকটে কমেছে বিদেশ থেকে ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল আমদানি। একই সঙ্গে পুরনো জাহাজ থেকে প্রাপ্ত লোহার টুকরাও কমেছে। অন্যদিকে টনপ্রতি ইস্পাত পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। এতে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এতে সবমিলিয়ে নির্মাণ খাতে ইস্পাত পণ্যের ব্যবহার কমেছে। ফলে বড় কোম্পানিগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার ৬০ শতাংশেরও বেশি অব্যবহƒত থাকছে।
ইস্পাত কোম্পানিগুলোর সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের পর দেশের ইস্পাত খাতে বাজার দ্রুতবর্ধনশীল হয়। এ সময়ে পুরোনো প্রযুক্তির কোম্পানিগুলো ইনডাক্টশন প্রযুক্তি থেকে ফার্নেস প্রযুক্তির দিকে মনোযোগী হয়। যাদের এক লাখ টন উৎপাদন সক্ষমতা ছিল, তারা তিন গুণ থেকে দশ গুণ সক্ষমতার কারখানা স্থাপন করে। এ তালিকায় এগিয়ে ছিল বিএসআরএম, আবুল খায়ের, জিপিএইচ, কেএসআরএম এবং এইচএম স্টিল। তাদের উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৫০ লাখ টন। এর মধ্যে বিএসআরএমের উৎপাদন সক্ষমতা ১৮ লাখ টন, একেএস স্টিলের ১৪ লাখ টন, জিপিএইচ ইস্পাতের দশ লাখ টন, কেএসআরএমর আট লাখ টন। বাকিগুলো বছরের দুই থেকে চার টন উৎপাদন সক্ষমতার কারখানা। তবে তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বছরের ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টন। অন্যদিকে টনপ্রতি ইস্পাত পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। এতে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এতে সবমিলিয়ে নির্মাণ খাতে ইস্পাত পণ্যের ব্যবহার কমেছে।
দেশীয় রড কোম্পানিগুলোর সূত্রমতে, বর্তমানে দেশের ইস্পাতের বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। আর বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৯০ লাখ মেট্রিক টন হলেও এখন চাহিদা এর অর্ধেক। এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ চাহিদার নেপথ্যে রয়েছে সরকারের উন্নয়নযজ্ঞ। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা-অনিশ্চয়তা, নাগরিক আবাসন ও অন্যান্য নির্মাণ প্রকল্পে ধীরগতিসহ নানা কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্পে কিছুটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, মূলত সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোই ইস্পাতের চাহিদা কমায় এ খাতে মন্দা আরও বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ও জাহাজ ভাঙা ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, এলসি নিয়ে কড়াকড়িতে বিদায়ী অর্থবছর দেশে পুরোনো জাহাজ আমদানি হয়েছিল ১৪৭টি। এতে মোট নয় লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন স্ক্র্যাব লোহা পাওয়া যায়। অথচ আগের বছরের ২০০ জাহাজ আমদানি হয়েছিল। এতে ১৮ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন স্ক্র্যাব লোহার টুকরা পাওয়া যায়।
উদ্যোক্তাদের মতে, চলমান ডলার সংকটের কারণে ভোক্তার ব্যয় সংকোচন হয়েছে। ফলে বেশ কয়েকটি মিল বন্ধ হয়েছে। আর কিছু নামে মাত্র উৎপাদন চলছে। এছাড়া বড় কারখানাগুলো আয় ও ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে টিকে আছে।
একটি বেসরকারি প্রথম প্রজন্মের ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, বড় আকারে উৎপাদন সক্ষমতার একটি কোম্পানি নিয়মিত ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাদের এলসি সুবিধা কমিয়েছি। এভাবে আগামী দুই বছর চললে তারা নিশ্চিত ঋণখেলাপি হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর উচিত হবে বুঝে বিনিয়োগ করা।
ইন্ডাকশন প্রক্রিয়ায় উৎপাদনে থাকা একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, অর্থনৈতিক সংকটে আমাদের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। এলসি সুবিধা বন্ধ। মূলত সেকেন্ড পার্টি থেকে কাঁচামাল নিয়ে উৎপাদন করছি। কিন্তু ইস্পাতের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূলত রডের চাহিদা ও বিক্রি কম। এখন যে পরিমাণ ফান্ড দরকার তার জন্য ব্যাংক সাপোর্ট পাচ্ছি না। আমরা বিকল্প উপায়ে চেষ্টা করছি অর্থ সংকট কাটাতে।
এ বিষয়ে বিএসআরএমর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত শেয়ার বিজকে বলেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো চাহিদা মতো এলসি সুবিধা দিতে পারছে না। ফলে চাহিদার চেয়েও অনেক কম ইস্পাতের কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে। এতে ইস্পাত খাতে সম্মিলিত উৎপাদন ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারের কাঁচামালের দাম অনেক কমেছে। কিন্তু দেশে ডলারের দাম বেশি থাকায় ভোক্তারা দাম কমার সুযোগ পাচ্ছে না।