নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৬ জুলাই কারিগরি ত্রুটির কারণে তৃতীয় দফা বন্ধ হয়ে যায় রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর পর থেকে প্রতিদিন বাড়ছে লোডশেডিং। তবে গত কয়েক দিনে লোডশেডিংয়ের প্রবণতায় কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেছে। দিনের চেয়ে রাতে বিশেষত মধ্যরাতে (রাত ১২টা থেকে ২টা) বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এর মধ্যে ১৮ জুলাই রাত ১১টা থেকে গতকাল (২০ জুলাই) পর্যন্ত এক হাজার ১০০ থেকে দুই হাজার ৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
সূত্রমতে, কারিগরি সমস্যার কারণে ১৬ জুলাই (রোববার) বেলা ১টা ২০ মিনিটে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্ল্যান্ডফিল লিকেজ হওয়ায় এটি ট্রিপ করে যায়। এতে ওই সময় থেকেই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হওয়ার আগে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে গড়ে ৩০০-৩২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছিল। তবে কয়লা সংকটে এর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছিল না।
এদিকে রামপাল বন্ধের আগে ১৬ জুলাই রাত ১টায় সর্বোচ্চ এক হাজার ১২ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। রাত ২টায় তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৯২১ মেগাওয়াট। রামপাল বন্ধের পরের দিন মধ্যরাতে (রাত ১টা) লোডশেডিং হয় এক হাজার ৫৭১ মেগাওয়াট। আর রাত ২টায় লোডশেডিং হয় এক হাজার ৪৭৫ মেগাওয়াট। ১৮ জুলাই রাত ১টায় লোডশেডিং আরও বেড়ে হয় এক হাজার ৭০৮ মেগাওয়াট। ওইদিন রাত ২টায় লোডশেডিং ছিল এক হাজার ৬৪১ মেগাওয়াট।
পরের দুদিন লোডশেডিং আরও বেড়েছে। ১৮ জুলাই রাত ১১টা থেকে দিনে বা রাতে কখনোই এক হাজার ১০০ মেগাওয়াটের কম লোডশেডিং হয়নি। এর মধ্যে ১৯ জুলাই রাত ১টায় লোডশেডিং দাঁড়ায় এক হাজার ৯২৭ মেগাওয়াট এবং রাত ২টায় এক হাজার ৮০৯ মেগাওয়াট। আর ২০ জুলাই তা আরও বেড়ে গেছে। এর মধ্যে রাত ১টায় দুই হাজার ৮০ মেগাওয়াট এবং রাত ২টায় দুই হাজার ৬৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা বাড়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। শ্রাবণ মাসেও তাপমাত্রার এ অস্বাভাবিক আচরণ ও বৃষ্টি না হওয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকা। পুরোনোগুলো তো বন্ধ আছেই, সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে রামপালের বন্ধ হয়ে যাওয়া। এছাড়া গভীর রাত পর্যন্ত এখন থাকছে গরমের তেজ। এতে মধ্যরাতের পরও বিদ্যুতের চাহিদা তেমন একটা কমছে না। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন রাত ১০টার পর থেকে কিছুটা করে কমতে থাকে। মূলত এ কারণে গত কয়েক দিনে সর্বোচ্চ লোডশেডিং হচ্ছে মধ্যরাতে।
এদিকে জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। গত কয়েক দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে
রাত ৯টায় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত চাহিদা ছিল। তবে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াটেরও কম। ফলে লোডশেডিং এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি হচ্ছে। গতকাল সারাদিন গড়ে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে জ্বালানি সংকটে আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ ৫৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে জ্বালানি তেল সংকটে ৩৪টি, গ্যাস সংকটে ১৯টি ও কয়লা সংকটে একটি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। আর প্রয়োজনীয় পানির লেভেল না থাকায় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটি আংশিক চলছে। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১২টি, ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে ১৯টি ও যন্ত্রপাতির সমস্যার কারণে আরও ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।